বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মন্দিরে হামলার ঘটনায় ধর্মপ্রাণ কোন নাগরিক জড়িত নয়: চরমোনাই পীর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলতে পুজামণ্ডপে কুরআন অবমাননা ও পরবর্তীতে সারাদেশে হামলা- অগ্নিসংযোগ ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকাল ১০টায় পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের চলমান সংকট উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে ওলামা মাশায়েখ ও রাজনীতিবিদগণের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

একথা স্পষ্ট যে, এসকল ঘটনায় ধর্মভিত্তিক কোন দল, সংগঠন বা ধর্মপ্রাণ নাগিরক জড়িত নয়। ইসলামী সংগঠনের তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, কুমিল্লায় মন্দিরে পবিত্র কুরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন করে সংকটের শুরু। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জনতার উপর পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমণ এবং রংপুরের মাঝি পল্লিতে অগ্নিসংযোগকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে একটি মহল তৎপর।

এসব হামলা, অগ্নিসংযোগ কোন ইসলামী সংগঠনের কাজ নয় বরং দেশ ও ইসলাম বিরোধী শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশ বিরোধী চক্রান্ত মোকাবেলা ও চলমান সঙ্কট উত্তরণে পীর সাহেব চরমোনাই আগামী ১৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সেমিনার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারি সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতী মুহিব্বুল্লাহিল বাকি নদভী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, বগুড়া জামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, প্রখ্যাত গবেষক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, সন্ধিপের পীর সাহেবের জামাতা মুফতী ওমর ফারুক সন্ধিপী, বেফাকুল মাদারিসে দ্বীনিয়ার মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী, গবেষক-রাজনীতিক অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জিরি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ খোবায়েব, সাবেক এমপি প্রফেসর ডা. আক্কাস আলী সরকার, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতী ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, ফরায়েজী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা আব্দুর রহমান ফরায়েজী, বাংলদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধি মুফতী আব্দুর রহীম সাঈদ।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি শ্রেণি বি¶োভ করে সংবিধান, ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী শ্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। ওই শ্রেণিটি সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেয়ার শ্লোগান দিচ্ছে।

তাদের শ্লোগানের সঙ্গে ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন বিজিপি’র শ্লোগানের মিল রয়েছে, যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তিনি বলেন, কথিত কিছু বুদ্ধিজীবী দেশে কোন সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেই আলেম ওলামা ও ইসলামী সংগঠনগুলোকে একতরফা দায়ী করে ৭২’এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার নামে এদেশে ইসলামপন্থীদের সকল তৎপরতা বন্ধের দাবি তুলছে। যাতে স্পষ্ট ইসলামপন্থিদেরকে ঘায়েল করতে পরিকিল্পিতভাবে এগুলো করা হচ্ছে।

পীর সাহেব বলেন, ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে বসেও একটি শ্রেণি তাল মিলাচ্ছে। এদেশের সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা মুসলমানদের চেয়ে বেশী ভোগ করছে, যা বিশ্বে বিরল। সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে কেউ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র সাজিয়েছে কিনা, তা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি সংকট নিরসনে দলমত নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।

মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, বাংলাদেশের ওপর কালো মেঘের ঘনঘটা শুরু হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা একটি ষড়যন্ত্র। ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংসের চক্রান্ত স্বরূপ এটা করা হয়েছে।

এ ঘটনার সাথে আলেম-ওলামা, ইসলামী সংগঠনের কেউ জড়িত প্রমাণ করতে পারেনি। বিজেপি নেতারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে সৈন্য পাঠাতে বলা প্রমাণ করে ষড়যন্ত্র কতটুকু গড়িয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কারণেই এদেশ আজ স্বাধীন। মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা পরিহার করা দরকার। মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, বাংলাদেশে ৮ ভাগ অমুসলিমদের ওপর কোন নির্যাতন হয়নি।

বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রাষ্ট্রের অবদান নয়, দেশের পীর মাশায়েখ ও ইসলামের অনুশীলনের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের অপরাজনীতির কারণে এ সংঘাত হয়েছে। তিনি বলেন, অমুসলিম সংখ্যালঘুদের যদি কোন সমস্যা হয়, তা ধর্মীয় কারণে নয়, সে সমস্যা তাদের সম্পদ গ্রাস করতে হিন্দুদের শুভাকাঙ্খিদাবিদাররা এসব ঘটনা ঘটায়। তিনি বলেন, ৭২’এর সংবিধানে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এদেশে ইসলামের রাজনীতি না চললে মার্কসবাদী, সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতিও চলবে না। মন্দিরে হামলা বা পুজামণ্ডপ ভাঙ্গার ঘটনা রাজনৈতিক নয়। বিদেশী কেউ জড়িত থাকলে তাদের পরিচয় জানতে চাই। তিনি কুমিল্লা ও রংপুরের ঘটনা তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী বলেন, দেশে যে সব ঘটনার অবতারণা তা সাম্প্রদতায়িক নয়, সাম্প্রদায়িক বলে রং দেয়া হয়েছে।

এর সাথে ধর্মপ্রাণ মানুষ জড়িত নয়। বেফাকুল মাদারিসে দ্বীনিয়ার মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথে কুমিল্লার ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। তবুও আজ উগ্রবাদি হিন্দু ও নাস্তিক্যবাদী শক্তিগুলো রাষ্ট্রধর্ম, ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার গড়ে তুলছে। ইসলাম কি বলে, বাস্তবে কি ঘটছে, এগুলো প্রতিটি মসজিদ থেকে বলা দরকার। আল্লামা মুফতী ওমর ফারুক সন্ধিপী বলেন, সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. কখনো বাতিলের সাথে আপোস করেননি।

আমাদের সকলকে এক হতে হবে, শক্তিশালী হতে হবে, বাতিলের সাথে আপোস করার সুযোগ নেই। ইসলামী ঐক্যজোট নেতা শেখ লোকমান হোসাইন বলেন, বিশ্বে ইসলামী জাগরণকে স্তব্ধ করতে ধারাবাহিক যে ষড়যন্ত্র চলছে, তার অংশ হলো কুমিল্লার ঘটনা। ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই’র যে কোন আহ্বানে আমরা সাড়া দিতে প্রস্তুত।

-এটি


সম্পর্কিত খবর