তারান্নুম ইসলাম: আজ বিকালে বেলকনিতে বসে একটি বই পড়ছিলাম, বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন ভিন্ন ভিন্নভাবে আমায় মুগ্ধ করেছিল। একধ্যানে পড়ে যাচ্ছি ,যেন এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেই শান্তি পাবো। বইটির মুগ্ধতায় পড়ে খুব ভালো লাগার একটি সময় পার করছিলাম। হঠাৎই বাইরে থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো।
নিচে তাকাতেই দেখি এক লোক মাটিতে পড়ে আছে , ততক্ষণে লাশ হয়ে গিয়েছে। তার পাশেই এক লোক দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। কিন্তু তাকে ছুঁয়ে দেখছে না। এমন অনিশ্চিত মৃত্যু দেখে ঘাবড়ে গিয়ে সেও হয়তো সচেতন হয়ে গিয়েছে। তার ধারণা বোধহয় এমন, ‘তাকে ছুঁয়ে দেখলে এই মৃত্যুর হাত থেকে তারও রক্ষে নেই।’
কিন্তু , আহ্ !! যে মারা গিয়েছে সে কি বুঝতে পেরেছিলো, ‘এই এখনই আমি মরে যাবে।’
অল্প সময়ের মধ্যেই আশপাশে নারী-পুরুষ অনেকেই জমা হয়ে গিয়েছে। লোকটাকে ধরাধরি করে কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িতে করে নিয়ে গেল হসপিটালে।
আজ আমাদের এদিকে বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা হয়েছে। বিদ্যুৎ ঠিক করতেই এসেছিলেন তারা দু’জন, অথচ একজন লাশ হয়ে ফিরল। তার সহযোগী বললেন, লোকটা নাকি মইয়ের উপর উঠে বউকে ফোন করেছিলেন। দু’বছরের ছোট একটি মেয়ে আছে, সে দুদিন ধরে জরে ভুগছে। সন্ধ্যার পর তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে। তাই বউকে রেডি হয়ে থাকতে বলছিল।
আর উঠেই বিদ্যুৎ সংযোগের কারনে ঠাস করে নিচে পড়ে গেলেন..। আহ কি নির্মম মৃত্যু !!
আমরা মৃত্যুর ব্যাপারে একেবারেই উদাসিন। অথচ কে কখন চলে যাবো আমরা কেউ জানি না। মৃত্যুর ব্যাপারে আমাদের
কতই না নির্লিপ্ততা। একবার মৃত্যুকে স্মরণও করি না। অথচ একদিন এভাবেই হঠাৎ করে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে
যেন মরতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।
এমন আকস্মিক মৃত্যু দেখে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা সেকেন্ড ও ভুলতে পারছিলাম না মৃত্যুর কথা। অথচ যত রাত হচ্ছে, আস্তে আস্তে আমি আমার আগের ভাবনায় ফিরে আসছি। কেমন মানুষ আমি ! আল্লাহ..।
আজ ওই লোকটার জায়গায় আমার ফ্যামিলির কেউ মারা গেলে হয়তো খুব কঠিন একটা মুহুর্ত পার করতে হতো বা আমি মারা গেলে আরো অনেক কঠিন মুহূর্ত পার করতে হতো। আমরা এগুলো বুঝেও মৃত্যুকে স্মরণ করি না। আল্লাহ আমাদের মধ্যে মৃত্যুর ভয় ঢুকিয়ে দিক। বেশি বেশি করে মৃত্যুকে স্মরণ করে যেন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি সেই তৌফিক দিক। আমিন। ইয়া রাব্বুল আলামীন।
-কেএল