আবদুর রশীদ।।
জীবন কালাতিপাত করার লগ্নে কতগুলো উৎস জীবনের বাধা হয়ে সামনে উপস্থিত হয় ৷ এমন শত বাধার ভিড়ে পড়ে আছে বেকারত্ব ৷ সমাজে যেন এই বেকারত্ব পরিচয়টা শুধু অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ জীবনের মূল্যায়ণ যেন অর্থের উপর নির্ভরশীল; এমনকি আত্মমর্যাদাও ৷ উপার্জনের উৎস না থাকায় স্বস্তিতে কোনো নিশ্বাস ফেলাও অস্বস্তিকর৷ বেকরত্ব যেন জীবনের প্রধান শত্রু৷
বেকরত্বকে নেগেটিভ চোখে তাকালে কেবল তা অভিশাপে রূপ নেয়৷ বেকারত্বের আড়ালেও ভালো কিছুর অবস্থান বিদ্যমান যা খোঁজে বের করতে হয়৷ এর জন্য প্রথম শর্ত হলো বেকারত্বকে পজিটিভ ওয়েইতে গ্রহণ করা এবং এর আড়ালে থাকা আলোর ভাণ্ডার খোঁজে বের করা ৷ একজন ব্যক্তিকে 'বেকারত্ব' প্রথম যে উপহার প্রদান করে তা হল 'সময়' যা অত্যন্ত মূল্যবান৷ পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা এর সম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে৷ যে যত বেশি এই উপহারের গুরুত্ব দিয়েছে সে তত বেশি সুখের সাফল্যে পদার্পণ করেছে৷
হতে পারে বেকারত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত৷ আল্লাহ চান যে, আপনি তাঁকে আরো বেশি সময় দিন ও বেশি করে তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তাঁর কাছে বেশি ইস্তেগফার করুন যেন আপনি ক্ষমা লাভ করতে পারেন৷
হয়তো এমন সময় উপস্থিত হতে পারে যখন রবের সাথে আপনার অনেকাংশে দূরত্ব বেড়ে যাবে৷ তিনি হয়তো আরো চান যে, আপনি বেকারত্বের এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা অর্জন করুন, নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা প্রদীপের কিরণ বৃদ্ধি করুন এবং সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর পথ বের করুন ৷ তবে, তিনি এটা চান না যে, আপনি বেকারত্বের এই সময়কে হেলায়-দুলায় কাটিয়ে দিন৷
বেকার অবস্থায় আপনি এটাও বলতে পারবেন না যে, আল্লাহ তা'য়ালা যা আমার জন্য নির্ধারিত করেছেন আরকি ৷ মূলত আপনার প্রচেষ্টা থাকতে হবে৷ আল্লাহ তা'য়ালা ওই ব্যক্তির ভাগ্য পরিবর্তন করে না যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট থাকে না ৷ সূরা ইনশিরাহর ৫ ও ৬ নং আয়াতে বলেছেন, নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ৷ সুতরাং প্রথমে কষ্ট মেনে নিতে হবে, যদি বেকারত্বের জীবন কাটিয়ে সুখ লাভ করতে চান৷
আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আসর-এর প্রথম আয়াতে সময়ের শপথ করে এর গুরুত্ব কতটুকু তা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ৷ আমরা জীবনে যে জিনিসকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিই এবং অধিক মাত্রায় যা অপচয় করি তা হল 'সময়' ৷ 'সময়' এমন একটা আল্লাহর দান যা ধনী-গরিব, উচু-নিচু, ছোট-বড় সবাই একই পরিমাণ উপভোগ করে থাকে ৷ সবার জন্য কিছু থাক আর না থাক, কিন্তু সময় আছে ৷ 'সময়' সবার ক্ষেত্রে সমান৷
বেকারত্বের পিছনে যেহেতু বেশি পরিমাণ সময় উপস্থিত ৷ তাই, কোনো একটা কাজে সাফল্য লাভ সম্ভব হয় ৷ বেকারত্বে আমাদের যে কাজগুলো করা সম্ভব তা হল- বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণে আমরা লিপ্ত থাকতে পারি, কুরআন পাঠ শুদ্ধ করতে পারি, একাডেমিক স্কিল বৃদ্ধি করতে পারি, যে কোনো বিষয়ের উপর গবেষণা করতে পারি, নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ইক্সেপশনাল কিছু মেইক করতে পারি, যে কোনো প্রকার হাতের বিদ্যা অর্জন করতে পারি, বেশি বেশি বই পড়তে পারি, বেশি পরিমাণ শারীরিক ব্যায়াম করতে পারি, পাশাপাশি রোজাও রাখতে পারি এবং পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করতে পারি ইত্যাদি৷
বেকারত্বের গুরুত্ব না বুঝে হতাশা আর নিরাশার জালে বন্ধি হয়ে অন্ধের মতো গড়াগড়ি করার চেয়ে বেকারত্বের দেওয়া সেরা উপহার 'সময়'-কে কাজে লাগিয়ে আলোর পথ উন্মোচন করা একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য বড় সাফল্যের৷ আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সঠিক বুঝার এবং সময়কে যথাযথ মূল্যায়ণ করে ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য লাভ করার তৌফিক দান করুক৷ আমিন !
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম, সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম
-এটি