শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’

আমার প্রিয় শাইখ আল্লামা বাবুনগরী রহ. ও কিছু স্মৃতিচারণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা.মাওলানা ইসমাইল আজহারি।।

আমার প্রিয় অভিভাবক তুল্য শাইখ, আমাদেরকে সহীহ মুসলিম শরীফ এর দরস দিয়েছিলেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ সময়ে। হুযুর এর দরস প্রদানের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো, সহীহ বোখারী আর সহীহ মুসলিমের মধ্যে হাদীসের অনেক তাকরার পাওয়া যায়৷ হুযুর প্রথম কয়েক সপ্তাহ লাগাতেন কেবল মুকাদ্দামা শেষ করতে।

মুসলিম শরিফের দরস অন্যান্য কিতাব থেকে কিছুটা আলাদা৷ শুরুতে ভূমিকা রয়েছে অনেক বড়, এই ভূমিকা তথা মুকাদ্দামাতু মুসলিম পড়ানোর প্রতি হুযুর অনেক বেশী জোর দিতেন। হুযুরের সিস্টেম ছিলো, প্রতিটা হাদীসের সারমর্ম একবার বাংলাতে বুঝিয়ে দিতেন। তারপর সরল অনুবাদ বলতেন এরপর এই হাদীস থেকে কি শিক্ষা পেলাম এই রকম একটা উপসংহার টানতেন।

আমাদের সময় ছাত্র ছিলো প্রায় ২৩০০ জন।একই শ্রেণীকক্ষে সকল ছাত্র হুযুরের দরসে অংশগ্রহণ করতো।

হুযুরের লম্বা সময় দরসের সময় কারো মধ্যে বিরক্তি আসত না, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাদীসের ক্লাসের সিস্টেম হচ্ছে একজন ছাত্র লাউডস্পিকারে হাদীসের মতন (টেক্সট) পড়বে, হুযুর হাদীসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করবেন, হুযুর ছাত্রদের প্রতি মনোযোগ দিতেন, ২৩০০ ছাত্র থাকলেও মতন পড়তো ২০০-৩০০ জন, এর মাঝে নতুনরা সুযোগ কম পেতো, আমি একদিন হুযুরের সামনে মতন পড়তে বসেছিলাম। সেইদিন ছিলো আমার প্রথম দিন, কিতাবুস সিয়াম থেকে পড়তে শুরু করলাম, আমি পড়ি, হুযুর অনুবাদ করেন, এইভাবে প্রায় ১০ পৃষ্ঠা পড়লাম, আমি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবে হুযুরের মধ্যে ক্লান্তি দেখিনি।

দরস শেষে হুযুর বললেন, ‘আরেকটু ধিরে পড়বা, তাহলে ক্লান্তি লাগবে না’। এরপর হুযুর রুমে চলে যান এবং একজন ছাত্র দিয়ে খবর পাঠালেন যেনো হুযুরের সাথে দেখা করি। আমি যে বছর দাওরা পড়ি,আমার সহপাঠীদের মধ্যে সবার চেয়ে আমার বয়স কম ছিলো, মুখে দাঁড়িও উঠেনি, তাই একটু ভয় পেলাম, কেনো হুযুর দেখা করতে বললো।

হুযুরের রুমের কয়েক রুম পরেই আমার রুম ছিলো। রুম বলতে আসলে কিছু ছিল না, সিট শেষ হয়ে গেলে অন্যদের মসজিদে থাকতে হতো, আমিও মসজিদে থাকতাম। আসর নামাজের পরে হুযুরের সাথে দেখা করতে গেলাম।

হুযুর বললো, ‘ওই মিয়া, তুমি তো দেরি করে ফেলেছো! বোখারী শরীফের খতম ছিলো, এক পারা পড়লে তো ১০০ টাকা হাদিয়া পেতে!’ এই বলে হুযুর হেসে দিলেন! সেই অমলিন হাসির সাথে আরো বললেন, ‘যোগাযোগ রাখবা সব সময়।’ এইভাবেই হুযুরের কাছে আসা-যাওয়া শুরু হয়।

কোনো হাদীস হুযুর শুরু করলে সেই হাদীসের একটি সার নির্যাসহ বের করে ছাড়তেন। হাদীস থেকে মাসয়ালা বের করার সিস্টেম গুলি হুযুরের কাছেই শেখা। হাদীসের মধ্যে শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সুন্দর অর্থবহ নাম রাখার জন্য৷ আমি হুযুরের রুমে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, হুযুর, জামিলা নামের অর্থ হচ্ছে সুন্দরী, এখন কেউ যদি জামিলা নাম না রেখে বিউটি রাখে, তখন এইটার ব্যাপারে হুকুম কি। কারণ ইংরেজি বিউটি অর্থ সৌন্দর্য, জামিলা নামের ইংরেজি সমার্থক।

হুযুর বললেন,যদিও এইটা সমার্থক, তবে বিজাতীয় কালচারের সাথে মিলার কারণে এইটা মাকরুহ হবে। এই কথার সাথে সাথে অনেক মাসয়ালা সমাধান হয়ে গেলো। এইভাবে কোনো কিছুতে সন্দেহ হলে বিকালে হুযুরের কাছে চলে গেলে তিনি বুঝিয়ে দিতেন। মাঝে মধ্যে রাত ১২-১ টা পর্যন্ত হুযুর গল্প করতেন, পুরো বাংলাদেশের হালচাল তিনি খবর রাখতেন।

আজ শাইখ আমাদের কে ছেড়ে মহান আল্লাহর দিদার লাভে চলে গেলেন। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি জীবনের ৪০ টা বছর শুধু আল্লাহর রাসূলের হাদীস পাঠ করে কাটিয়েছেন।

হুযুর সব সময় বলতেন, তোমরা হাদীস পড়ার সময় প্রিয় নবিজির রাওযার সাথে তোমাদের আত্মার একটা কানেকশন হয়ে যাবে, কারণ দৈনিক যদি ৬ ঘন্টা পড়া হয়, তারা মানে ৬ ঘন্টাই রাসূল সা. কে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ পাক শাইখকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ