আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায়, রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় প্রশাসক। স্বাস্থ্য খাতের মতো এমন ইস্যু নিয়েও বিদ্বেষ ছড়ানোয় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এদিকে জোরেশোরে চলছে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের টিকাদান কার্যক্রম। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের টিকার আওতায় এনেছে বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই পৌঁছে যাচ্ছে ভ্যাকসিন। ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহের সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়, তারপর থেকে তাদের সব দায়িত্বই নিয়েছে শেখ হাসিনা প্রশাসন। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে একযোগে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে।
করোনা টিকা দিতে পারায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রোহিঙ্গারা। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় ক্যাম্পে ঝুঁকি কমাতে এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
ঠিক এর উল্টো চিত্র মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বেলায়। তাদের যেমন বন্দিশালায় রাখা হয়েছে, দেয়া হচ্ছে না কোনও অধিকার, তেমনি টিকা কার্যক্রমেও নেই তাদের নাম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা টিকা পরিকল্পনা থেকে বাদ গেছেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়া জান্তা সরকারেরও ভাবনায় নেই এই জনগোষ্ঠীর মানুষ।
রাখাইনের সিত্তে এলাকার স্থানীয় প্রশাসক খিউ লউইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'রাখাইনের অগ্রাধিকারের তালিকায় রোহিঙ্গারা নেই। এ তালিকায় অন্য সম্প্রদায়ের বয়স্ক ব্যক্তি, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি কর্মী ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে ১০ হাজার জনের টিকা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যাতে আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাসকারী কোনও মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।'
রাখাইনের সিত্তের ঘিঞ্জি, কর্দমাক্ত ও স্যাঁতসেঁতে আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই বন্দিদশাতেও করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন শিবিরের বাসিন্দারা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমারে এখন গড়ে ৩০০ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের ধারণা, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। আক্রান্ত দৈনিক গড়ে চার হাজার।
রোহিঙ্গাদের টিকা না দেয়ার বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটসের বিশেষজ্ঞ জ উইন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা টিকা প্রাপ্তির অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই, এটা দুঃখজনক। মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে এর থেকে বেশি ভালো কিছু আশা করা যায় না।’ সূত্র: ইকনা
-এটি