আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: লিফ সিতনি নরওয়ের রাজধানী অসলোতে বেড়ে ওঠেন। ১৯৮৪ সালে সুইডেনের স্মেজেবেকেন শহরে স্থানান্তরিত হন।
স্থানীয় নরবার্ক প্যারিস চার্চে যাজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। এরপর তিনি স্কিলিংগারইয়েডের ‘প্যাস্টরেট’-এ যোগ দেন।
তিনি সেখানকার একজন মন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি বহু গির্জায় বিশেষ যাজক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ‘চার্চ অব সুইডেনে’ কাজ করার সময় শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। আবদুল্লাহ নামের একজন মুসলিম শরণার্থীর সঙ্গে পরিচয়ের পর তাঁর জীবন বদলে যায়।
এই মুসলিম যুবক তাঁকে পিতা সম্মোধন করতেন। কেননা তাঁর পিতা মারা গেছেন। লিফ সিতনির ঘরে দেড় বছর তারা একসঙ্গে ছিল।
সিতনি বলেন, আবদুল্লাহর সঙ্গে থাকার সময় তিনি গভীরভাবে ইসলামকে জানার সুযোগ পান। আবদুল্লাহ একজন ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। তিনি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ ইসলামের অন্য ইবাদতগুলো পালন করতেন।
তাঁর কাছ থেকেই ৭৪ বছর বয়সী একজন যাজক ইসলাম জানতে শুরু করেন। যাজক লিফ সিতনি মরক্কো থেকে আগত শরণার্থী আবদুল্লাহকে সঙ্গে থাকার সুযোগ দেন। কেননা আবদুল্লাহ শরণার্থী ক্যাম্পে থাকতে পছন্দ করতেন না। এই সময় বহু ঘটনা ঘটে যায়।
যার সূচনা হয়েছিল এভাবে—একদিন ‘সুইডিশ ফর ইমিগ্রেশন’ (এসএফআই)-এর একজন শিক্ষক যাজক সিতনিকে জানালেন, একজন মুসলিম শরণার্থী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। সে দেখা করে তাঁকে নিজের সমস্যার কথা জানায় এবং যাজক তাকে নিজ ঘরে জায়গা দেন। ১৮ বছর বয়সী আবদুল্লাহ তাকে ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে নানা প্রশ্ন করত। যেমন—আপনি চার্চে প্রার্থনা করেন, কিন্তু ঘরে প্রার্থনা করেন না কেন?
সাধারণ খ্রিস্টানদের জন্য বাইবেলচর্চা উন্মুক্ত নয় কেন? আপনি ঘরে কেন তা চর্চা করেন না? যেখানেই থাকি না কেন, আমি নামাজ পড়ি, কোরআন তিলাওয়াত করি।
এসব প্রশ্ন সিতনির ধর্মীয় জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। তাঁর ভাষায়, ‘নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি খ্রিস্টবাদে বিশ্বাস করি, খ্রিস্টবাদের লক্ষ্যের সঙ্গে আমি কি একমত? জবাব আসে না। আমি যতই নিজের ধর্ম নিয়ে চিন্তা করছিলাম, বিষয়গুলো ততই তা অযৌক্তিক মনে হচ্ছিল।’
২০১৭ সালের শরত্কালে লিফ সিতনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নিজের নাম পরিবর্তন করে আহমদ সিতনি রাখেন। এরপর তিনি মরক্কোতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। সিতনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। সম্ভবত আমিই প্রথম কোনো স্কেন্ডেনেভিয়ান যাজক, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে।’
ইসলাম গ্রহণ করে মরক্কো আসার পর চার্চ ব্যবস্থাপনার একাধিক ব্যক্তিকে তার কাছে পাঠানো হয়, যেন এই বৃদ্ধ যাজক তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বর্তমানে সিতনি মরক্কোর ফেজ শহরে বসবাস করছেন।
ইসলাম গ্রহণের পর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আরবি ভাষা আমার জন্য একটা জটিলতা তৈরি করে। আমি খুব ভালো আরবি পারি না। তবে মরক্কোর আবহাওয়া বসবাসের জন্য ভালো। কেননা এখানের গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি। এ ছাড়া মহামারির কারণে আমি বিশেষ উপলক্ষে মসজিদে যেতে পারছি। এটাও একটা জটিলতা।’
আহমদ সিতনির ইসলাম গ্রহণ সাধারণ কোনো বিষয় ছিল না। কেননা পরিণত বয়সের বেশির ভাগ সময় তিনি যাজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছে। সূত্র: ইকনা
-এটি