হাবিবা রহমান উজরা: একজন সাধারণ মুসলিম শরণার্থীর দাওয়াতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন সুইডেনের এক ধর্মযাজক। এ ধর্মযাজকের নাম ছিলো লিফ সিতনি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার নাম রাখা হয় আহমদ সিতনি। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নরওয়ের রাজধানী অসলোতে হলেও দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি সুইডেনে একজন ধর্মযাজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চার্চের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি শরণার্থীদের নিয়েও কাজ করতেন। তরুণ মুসলিম শরণার্থী আবদুল্লাহ প্রবীণ এই ধর্মযাজককে ইসলামের পথে নিয়ে আসেন।
লিফ সিতনি নরওয়ের রাজধানী অসলোতে বেড়ে ওঠেন। ১৯৮৪ সালে সুইডেনের স্মেজেবেকেন শহরে স্থানান্তরিত হন। স্থানীয় নরবার্ক প্যারিস চার্চে যাজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। এরপর তিনি স্কিলিংগারইয়েডের ‘প্যাস্টরেট’-এ যোগ দেন। তিনি সেখানকার একজন মন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি বহু গির্জায় বিশেষ যাজক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ‘চার্চ অব সুইডেনে’ কাজ করার সময় শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। আবদুল্লাহ নামের একজন মুসলিম শরণার্থীর সঙ্গে পরিচয়ের পর তাঁর জীবন বদলে যায়। এই মুসলিম যুবক তাঁকে পিতা সম্মোধন করতেন। কেননা তাঁর পিতা মারা গেছেন। লিফ সিতনির ঘরে দেড় বছর তারা একসঙ্গে ছিল।
সিতনি বলেন, আবদুল্লাহর সঙ্গে থাকার সময় তিনি গভীরভাবে ইসলামকে জানার সুযোগ পান। আবদুল্লাহ একজন ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। তিনি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ ইসলামের অন্য ইবাদতগুলো পালন করতেন। তাঁর কাছ থেকেই ৭৪ বছর বয়সী একজন যাজক ইসলাম জানতে শুরু করেন।
২০১৭ সালের শরত্কালে লিফ সিতনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নিজের নাম পরিবর্তন করে আহমদ সিতনি রাখেন। এরপর তিনি মরক্কোতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। সিতনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। সম্ভবত আমিই প্রথম কোনো স্কেন্ডেনেভিয়ান যাজক, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে।’
ইসলাম গ্রহণ করে মরক্কো আসার পর চার্চ ব্যবস্থাপনার একাধিক ব্যক্তিকে তার কাছে পাঠানো হয়, যেন এই বৃদ্ধ যাজক তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বর্তমানে সিতনি মরক্কোর ফেজ শহরে বসবাস করছেন। ইসলাম গ্রহণের পর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আরবি ভাষা আমার জন্য একটা জটিলতা তৈরি করে। আমি খুব ভালো আরবি পারি না। তবে মরক্কোর আবহাওয়া বসবাসের জন্য ভালো। কেননা এখানের গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি। এ ছাড়া মহামারির কারণে আমি বিশেষ উপলক্ষে মসজিদে যেতে পারছি। এটাও একটা জটিলতা।’
আহমদ সিতনির ইসলাম গ্রহণ সাধারণ কোনো বিষয় ছিল না। কেননা পরিণত বয়সের বেশির ভাগ সময় তিনি যাজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছে।
এমডব্লিউ/