আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আজ ১০ যিলহজ ১৪৪২ হিজরী রোজ বুধবার পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিন। মুসলিম জীবনে ঈদুল ফিতরের ন্যায় আরেকটি মহা খুশির দিন। এদিন ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা সকলেই ঈদগাহে সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করবে। আর সামর্থ্যবান মুমিন বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য তাদের কুরবানীর পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবে। এরপর তাঁর মেহমানদারী গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করবে।
বছর ঘুরে আবারো উপস্থিত এ মহিমান্বিত দিবস। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ গতকাল উদযাপন করেছে। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ি পশু কোরবানি করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। তারা চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।
আজ কুরবানির দিন। কুরবানী বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন আত্মত্যাগের ঘটনা। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ. এর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর রাহে কুরবানীর স্মৃতিচারণে মুসলিম উম্মাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী কুরবানীর মহান ব্রত পালন করে আসছে। বিশ্বমুসলিম ত্যাগের নিদর্শন স্বরূপ আল্লাহর হুকুম মোতাবেক, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবেহের মাধ্যমে কুরবানীর যে আনন্দ-উৎসব পালন করে থাকে, তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তিনি প্রিয় পুত্র ইসমাঈল আ. কে মহান আল্লাহর হুকুমে কুরবানি দেয়ার উদ্দেশ্য সাধন করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা মুহাম্মাদী উম্মতের জন্য পালনীয় বিধানে পরিণত করা হয়েছে।
কুরবানী হলো, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। যা ইবরাহীম আ. করে দেখিয়েছেন। কেবল গোশত খাওয়ার নাম কুরবানী নয়। আল্লাহর রাহে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়া, তাকওয়া হাসিলের লক্ষ্যে পশুর গলায় নয় বরং সকল প্রবৃত্তির গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর প্রেমে পাগলপরা হওয়া হলো কুরবানীর তাৎপর্য।
সংকট-দুর্যোগের মধ্যদিয়ে ঈদুল আযহা আমাদের মাঝে সমাগত। বিগত এক শতকে দেশে এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপন হবার কোন নজির নেই। একদিকে করোনা সংকটে দিশেহারা মানুষ। বিপর্যন্ত জনজীবন। অর্থনীতির চাকা মন্থর।
এবারের ঈদুল আযহায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, ঈদুল আযহা আমাদেরকে ত্যাগ ও কুরবানীর আদর্শে উজ্জীবিত করে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে সবকিছু বিলীন করে দেয়ার চেতনা জাগ্রত করে ঈদুল আযহা।
মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতাসহ দেশের ইসলামি দল ও সংগঠনসমূহ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় শনিবার দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনা ও বন্যার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কুরবানীর ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দু:স্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে।
এনটি