আবদুল্লাহ তামিম ও নুরুদ্দীন তাসলিম ।।
মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেওয়ার সময় কাবা শরীফের ইমাম শায়েখ ড. বান্দার বালিলা বলেন, উম্মতে মুসলিমার উচিত পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা। এসময় তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না‘।
খুতবাতে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আমি ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং কাউকে শরিক মানবে না। নবীজি সা. বর্ণনা করেছেন, তোমরা পৃথিবীতে বসবাসকারীদের উপরে দয়া করো, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর দয়া করবেন।
তিনি বলেন, উম্মতের পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। আল্লাহর রহমত থেকে সেই ব্যক্তিই নিরাশ হয় যে গোমরা হয়ে গেছে। দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার রহমত আমার আজাবের উপর প্রাধান্য পায়। নবীজি সা. বলেছেন জান্নাতে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
কাবার ইমাম খুতবায় আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা যেভাবে তোমার উপর অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও অন্যের উপর অনুগ্রহ করো। আল্লাহ তাআলার রহমত অনুগ্রহ কারীদের নিকটবর্তী থাকে সবসময়। আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ-এর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ হলো পিতা-মাতার পরে আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো আচরণ করো।
রাসুল সা. বলেছেন ,নিজের চাকর-বাকরদের সাথে ভালো আচরণ করো। নিজের অধীনস্থ চাকর-বাকরদের তাদের শক্তি-সামর্থের উপরে বোঝা চাপিয়ে দেবে না।অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
খুতবায় তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমার জন্য কুরানকে নাযিল করা হয়েছে যেন তুমি হেদায়েত পাও। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন। নিজের আত্মা শুদ্ধিকর এবং তাকওয়া অবলম্বন করো। নিজের রবের এবাদত এমনভাবে করো যেন তিনি তোমাকে দেখছেন।
কাবার ইমাম খুতবায় আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার রজ্জুকে শক্তভাবে ধরো।এবং মতপার্থক্যের যেওনা। পরস্পরের মাঝে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্ক তৈরি কর। বিদ্বেষ ও শত্রুতা খতম কর। পৃথিবীতে ভারসাম্যতা তৈরি করা। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ক্ষমা করা।
কাবার ইমাম আরো বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমারা নামাজ আদায় কর। নিজের নফসকে হেফাজত কর। আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ কর। আল্লাহ বললেন, শয়তান আপনাকে বিপথগামী করার চেষ্টা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
কাবার ইমাম খুতবায় আরও বলেছেন, যে ফজিলত হল আপনি আল্লাহর এবাদত করেন যেন আপনি তাকে দেখছেন। যদি এটি সম্ভব না হয় তবে ভাববেন যে তিনি আপনাকে দেখছেন। আল্লাহ বলেন, কোন বান্দা যদি নিজের উপর অন্যায় করে তবে তার জন্য তওবা করার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, যদি কোন এলাকায় কোনও রোগ ছড়িয়ে পড়ে থাকে তবে সেখানে যাবেন না।
হজের খুতবাতে আরো বলা হয়, অহংকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের সাথে সদয় আচরণ করেন।আল্লাহ বলেছেন: আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, মহানবী হলেন সর্বশেষ নবী। তোমরা তোমাদের নামাজ সংরক্ষণ কর, নামাজের ব্যপারে যত্নবান হও। আল্লাহ পরাক্রমশালী, তাকে ভয় করুন এবং তাকওয়া অবলম্বন করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব মানুষের সঙ্গেই রয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কারো আমলকে বিনষ্ট করেন না।
প্রসঙ্গত, এবারের হজে আরাফার ময়দানে খুতবা পড়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে শায়েখ ড. বান্দার বালিলাকে।সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ রাজকীয় এক ফরমানে শায়েখ ড. বান্দার বালিলাকে খুতবার জন্য নিযুক্ত করেন।
মক্কার বিশ্ববিখ্যাত ইউনিভার্সিটি উম্মুল কুরা থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বান্দার বালিলা। এরপর একই ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি আইন নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
এরপর বিশ্ববিখ্যাত মদিনা ইসলামি ইউনিভার্সিটির শরীয়া অনুষদ থেকে ইসলামিক আইন নিয়ে ডক্টরেট করেন।
২০১৩ সাল থেকে তিনি মসজিদ আল-হারামে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি তায়েফ ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৯ সাল থেকে মসজিদ আল-হারামে খতিব হিসেবে দায়ীত্ব পান বান্দার বালিলা। ২০২০ সালের রবিউল আউয়াল মাসে সৌদী আরবের সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনিত হন তিনি।
এনটি