কাজী আব্দুল্লাহ ।।
কর্মস্থলে হিজাব পড়া নিষিদ্ধের পক্ষে রায় দিয়েছে ইউরোপ ইউনিউনের শীর্ষ একটি আদলত।
ইউরোপের শীর্ষ আদালত রায়ে বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা বৈষম্যমূলক আচরণের মধ্যে পড়বে না। যদি সেই প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীর জন্য তৈরি আচরণবিধিতে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ থাকে, তাহলে শুধু হিজাবের জন্য একে অবৈধ বলা যাবে না।
জার্মানিতে হিজাব পড়ার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া মুসলিম নারীদের উত্থাপিত দুটি মামলা থেকে এই রায় এসেছে। রায়ে বলা হয়, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের হিজাবসহ যেকোনো রকম রাজনৈতিক, দার্শনিক অথবা ধর্মীয় পরিচয় লোকের সামনে তুলে ধরে—এমন পোশাক বা প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করতে পারবে।
জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্সসহ অনেক দেশেই হিজাব পরিহিত মহিলাদের নিয়োগ দেয়ার সময়ই এই বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়া হয় যে তারা মাথা ঢেকে আবৃত হয়ে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে আসতে পারবে না। ধর্মীয় কারণে এই বিধিনিষেধ মানা সম্ভব হয় না বলে অনেকেই হিজাব পড়ে কর্মস্থলে আসতেন।
কখনো কখনো লজ্জায় অথবা চাকরি হারানোর ভয়ে তারা হিজাব খুলে ফেলতেন। এতোদিন বিষয়টি চারদেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকলেও কয়েকদিন আগে জার্মানিতে দুইজন নারীকে হিজাব পড়ার দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ঐ দুই জার্মান নারী দমে না গিয়ে আদালতে এই বর্ণবিদ্বেষী ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন।
কিন্তু আদালতের এই রায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা সহ ইউরোপের সাধারণ মুসলিমরা। এই রায়ে ইউরোপ জুড়ে চলছে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়। মুসলিম বিরোধী নির্যাতন মোকাবেলা করা সংস্থা মামাক বলছে, এটি "পুরো ইউরোপ জুড়ে ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করবে।
বহু বছর ধরে ইউরোপ জুড়ে হিজাবকে কেন্দ্র করে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে, অনেক দেশ হিজাবকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইন প্রণয়ন করে আসছে।
শুধু তাই নয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এর আগে বোরকা পরিধানকারী মুসলিম মহিলাদের তুলনা করেছেন “লেটার বক্স” এবং “ব্যাংক ডাকাত” এর সাথে।
জনসনের এমন মন্তব্যের পরে তখন ইউরোপে মুসলিম বিরোধী আক্রমণ তীব্রভাবে বাড়তে থাকে এবং যেখানে সপ্তাহে আট শতাংশ মুসলিম বিরোধী আক্রমণ হতো তা বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়ে যায়। এমনকি ৩৮ টি মুসলিমবিরোধী ঘৃণ্য ঘটনার মধ্যে ২২ টি ছিলো যেসব মহিলারা হিজাব বা বোরকা পড়তো তাদের উপর।
তবে এতো কিছুর পরেও ইউরোপে মুসলিম নারীদের কে নিজেদের ধর্মীয় সংস্কৃতির থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকগণ। তারা বলছেন বিভিন্ন সময়ে এমন স্রোতের বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের বিচার বিভাগ ও দেশগুলো। কিন্তু সকল প্রতিকূল অবস্থা ডিঙ্গিয়ে ইউরোপের মুসলিম মহিলারা নিজেদের ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছে সবসময়।
আই নিউজ থেকে কাজী আবদুল্লাহর অনুবাদ
-এটি