আন্দামান নওশাদ: ২০ দলীয় বিএনপি জোট তাদের প্রধানতম শরীক দল জমিয়তকে বিভিন্ন বিষয়ে বারবার অবমূল্যায়ন, ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ, ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপি মহাসচিবের অবিশ্বাসের হঠকারী বিবৃতির কারণে জোট ছেড়েছি বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া। তবে জোট ত্যাগের সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে পরামর্শ সাপেক্ষেই হয়েছে। এটা কারো ব্যক্তিগত একার সিদ্ধান্ত নয় বলেও জানান তিনি।
আজ বুধবার দুপুর ১.৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমিয়ত সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা জিয়াউদ্দীন-এর সভাপতিত্বে আহুত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোট ত্যাগের ঘোষণা শেষে এক ফোন আলাপে এসব কথা বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল। দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐক্য, সম্প্রীতি, ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার ও স্বকীয়তা সংরক্ষণে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সােনালী ইতিহাস রয়েছে। দেশ ও জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে জমিয়ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌম রক্ষা, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর নেজাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জমিয়ত নিয়ােজিত। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আজকের সভায় ব্যাপক আলােচনা পর্যালােচান্তে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিশেষ এক পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নিবাচনী ঐক্য গড়ে তােলে। এ ধারাবহিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুখের সাথে বলতে হয় যে, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, সম্প্রতি শরিক দলগুলাের সাথে পরামর্শ করে মতামত না নিয়ে তিনটি আসনের উপনির্বাচন এককভাবে বর্জনের ঘােষণা করা, জোটের কোন কার্যক্রম না থাকা, বিএনপি মহাসচিবের শরীয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য দেয়া, দেশব্যাপী আলেম উলামাদের (জেলজুলুমের প্রতিবাদে কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখা এবং জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়ত মহা-সচিব আল্লামা নূর হােসাইন কাসেমী রহ.-এর ইন্তিকালের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন না করা ও জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জমিয়তের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাই জমিয়ত মনে করে বিশদলীয় জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাই জমিয়তের জন্য কল্যাণকর। আজ থেকে জমিয়ত জোটের কোন কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবেনা।
এছাড়া পেশ করা হয় পাঁচ দাবি। দাবিগুলো নিম্মরুপ:-
এক. সম্প্রতি মােদী আগমণ বিরােধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃত জমিয়ত নেতৃবৃন্দসহ সকল উলামায়ে কেরাম ও নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছে।
দুই. জমিয়ত নেতৃবৃন্দসহ উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে যে সব মামলা করা হয়েছে, সে সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং হয়রানী বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।
তিন. প্রাণঘাতি করােনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় কঠোর লক ডাউন, শাট ডাউন ঘােষণা করায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ ও সকল নাগরিককে দ্রুত সময়ের ভিতর টিকা দানের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী করছে।
চার. দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে ও ক্ষেত্রবিশেষ বহু কোমলমতি কিশাের সামাজিক নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাই আজকের সভা কওমী মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খােলে দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছে।
পাঁচ. বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম একটি খাত হলাে চামড়া শিল্প। এ চামড়ার বিশাল একটা অংশ পবিত্র ঈদুল আযহায় জবেহকৃত পশু থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে রহস্যজনকভাবে চামড়ার দরপতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে চামড়া শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তাই চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে চামড়া শিল্পকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জোর দাবী জানাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুল বছীর, সহকারী মহাসচিব মুফতি মাসুদুল করীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মুতীউর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা বশির আহমদ, মুফতি নাছির উদ্দীন খান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নাল আবেদীন, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরীসহ জমিয়তের নেতৃবৃন্দ।
এমডব্লিউ/