বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যোগী রাজ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুলফিকার জাহিদ।।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা আখ্যা দিয়ে ভারতের উত্তরপ্রদেশের যোগী রাজ্যে  জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি (২০২১-২০৩০) ’র বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইলমি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী। তিনি যোগী আদিত্যনাথের এই পলিসিকে মানবতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী বলেছেন, যেভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পলিসি প্রয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা মানবতাবিরোধী।

তিনি বলেন, যদি দু’য়ের অধিক বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে এবং তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় এতে বাচ্চাদের অপরাধ কি? এই আইন কোন ন্যায় সঙ্গত আইন নয় বরং এটা একটা ভুল পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী।

মুফতি আবুল কাসিম বলেছেন, ‘বিশ্ব ও জাতীয় জনসংখ্যা নীতি এবং পরিসংখ্যান সবসময় মাথায় রাখতে হবে এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আইন হওয়া উচিত’।

সবদিক বিবেচনায় তিনি যোগী সরকারের নতুন নীতিটি অবাঞ্ছিত হিসাবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, দু'য়ের বেশি বাচ্চার বাবা-মাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রভাব তাদের বাচ্চাদের উপর পড়বে।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের খসড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে চলছে বিতর্ক। এ বিতর্কের পালে আবারও হাওয়া দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রোববার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে এক টুইট বার্তায় তিনি ফের বলেন, উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক শর্ত হল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। একই সঙ্গে তিনি জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

উত্তর প্রদেশের নতুন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুযায়ী, দুইয়ের বেশি সন্তান নিলে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না, সরকারি চাকরিতে আবেদন বা পদোন্নতি পাওয়া যাবে না। এমনকি পাওয়া যাবে না সরকারি কোনও ভর্তুকি।

প্রস্তাবিত নীতিতে দুই সন্তান নেওয়া সরকারি কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব সরকারি কর্মীরা দুই সন্তান নেবেন তারা চাকরি জীবনে অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ১২ মাসের ছুটিসহ পাবেন পূর্ণ বেতন ও ভাতা। একই সঙ্গে জাতীয় পেনশন স্কিমের সহযোগিতা তহবিলেও তিন শতাংশ বেশি থাকবে তাদের জন্য।

এদিকে রোববার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে রাজ্যের নতুন জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিধানসভা পেশ করা হবে উত্তরপ্রদেশে পপুলেশন (কন্ট্রোল, স্টেবিলাইজেশন অ্যান্ড ওয়েলফেলার) বিল ২০২৯। বস্তুত, এই বিলের একাধিক প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে।

যোগী আদিত্যনাথের দাবি, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াই এই নতুন নীতির মূল লক্ষ্য বলে জানান যোগী আদিত্যনাথ।

এর আগে বৃহস্পতিবার এই নীতির বিস্তারিত পর্যালোচনার পরে যোগী মন্তব্য করেন, দারিদ্র এবং অশিক্ষাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিশেষত কিছু কিছু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে বিপুলভাবে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যে কারণে সম্প্রদায়ভিত্তিক সচেতনতা গড়ে তোলার দিকেই বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন। ১৯ জুলাই পর্যন্ত জনগণের কাছ থেকে নীতিটি উন্নত করার জন্য পরামর্শ আহ্বান করা হয়েছে। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্যের জনসংখ্যা তহবিল গঠন করা হচ্ছে।

বিধানসভা ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সুপরিকল্পিত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, নতুন আইন জারি করে যদি রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি, সেক্ষেত্রে ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের আগে সংসদে এই সংক্রান্ত বিল পেশ করবে মোদী সরকার।

সূত্র: মিল্লাত টাইমস।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ