আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আদালতে চলছে দুর্নীতির দুটি মামলা। বাদী–বিবাদী দুই পক্ষই সৌদি আরবের। এতে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই পক্ষভুক্ত নয়।
এরপরও মামলা দুটি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, আদালতে এই দুই মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির অতিগোপনীয় রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ কারণে মামলা দুটির বিচারপ্রক্রিয়ায় নজিরবিহীন হস্তক্ষেপের চিন্তাভাবনা করছে ওয়াশিংটন। চলমান মামলা দুটি বেশ আলোচিত। মূলত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেশটির সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের ক্ষমতার লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ এসব মামলা। একসময় নায়েফের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাদ আল জাবরি।
সৌদি প্রশাসনের গোয়েন্দা দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন কানাডায় স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ থেকে কাজ করেছেন তিনি।
সৌদি প্রশাসনে ২০১৭ সালে নায়েফের পরিবর্তে মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা বাড়লে দেশ ছাড়েন সাদ। তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেন বিন সালমান। তবে ব্যর্থ হন। সৌদি আরবে আটক করা হয় সাদের দুই সন্তানকে।
গত মার্চে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাকাব সৌদি হোল্ডিং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, সাবেক যুবরাজ নায়েফের অধীনে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময় ৩ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন সাদ। এ জন্য বোস্টনে সাদের ২৯ মিলিয়নের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করা হয়েছে।
একইভাবে কানাডার আদালতে সাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে কয়েকটি সৌদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এই দুই মামলা নিয়ে সৌদি সরকার, যুবরাজ সালমান কিংবা সাদ যতটা উদ্বিগ্ন, তার চেয়েও বেশি শঙ্কায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে গত এপ্রিলে মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস) ম্যাসাচুসেটসের আদালতকে জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত গোপন তথ্য প্রকাশ করে দিতে সাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
আদালতে পাঠানো নোটে মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই বিষয়ে (রাষ্ট্রীয় অতিগোপনীয় তথ্য প্রকাশ ঠেকাতে) কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে মার্কিন সরকার। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মে মাসে মার্কিন বিচার বিভাগ এসব মামলা পরিচালনায় চেয়ে পাঠানো রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য প্রদানের জন্য আদালতের কাছে সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। বলা হয়েছে, মার্কিন সরকার আদালতের চেয়ে পাঠানো অতিগোপনীয় তথ্য প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। তবে তা প্রকাশ্যে আনা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত তথ্য প্রদানে সরকারি দায়মুক্তি ব্যবহার করতে পারে ওয়াশিংটন। তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন বিচার বিভাগ সচরাচর আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় হস্তক্ষেপ করে না। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। দেশটির বিচার বিভাগের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
-এটি