বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কাজী সাহেব রহ. ছিলেন এক বেমেছাল ব্যক্তিত্ব: ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমার উস্তায হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.। কোনাে হক আদায় করতে পারিনি এই উস্তাযের। ঋণী, অনেক দিক থেকে ঋণী। আমি হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ-এর সান্নিধ্য যদি না পেতাম, তাহলে দেওবন্দ কাকে বলে চিনতাম না। দেওবন্দিয়াত কাকে বলে জানতাম না। জানতাম না আকাবির কাকে বলে। কয়েকজন মানুষ এরা আমার জীবনের মুহসিন। এরা আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। হযরত মাওলানা নুর হােছাইন কাসেমী দা.বা., আল্লাহ তাঁর হায়াতকে কবুল করুন। হযরত মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা., আল্লাহ তাকে উলুব্বে মরতবা দান করুন। হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুল হান্নান দা.বা. লন্ডনে থাকেন। মুফতি গােলাম মােস্তফা রহ., ইন্তেকাল করে গেছেন। হযরত মাওলানা উবাইদুল্লাহ ফারুক দা.বা. বারিধারা মাদরাসার শায়খুল হাদীস। ফরিদাবাদ মাদারাসার আরাে কিছু উস্তাদ ছিলেন, মুহাদ্দিস সাহেব ছিলেন আব্দুল হাফিজ সাহেব রহ.; ইন্তেকাল করে গেছেন। এঁদের সান্নিধ্যের কারণে দেওবন্দিয়াত চিনেছি। আকাবিরে দেওবন্দ; হযরত নানুতবী রহ., হযরত গাঙ্গুহী রহ., হযরত শায়খুল হিন্দ রহ., হযরত আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ., হযরত থানভী রহ., হযরত মাদানী রহ., হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ। উসমানী রহ., এরকম যত বুযুর্গানে দীন, শায়খুল হাদীস মাওলানা জাকারিয়া রহ, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., এঁদের সম্পর্কে জানা, তাঁদের নজরিয়া সম্পর্কে জানা এ সবকিছুই। কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.-এর ইহসান।

তখন মালিবাগ জামিয়ায় তাদের একটা গ্রুপ ছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.। তখন তারা মালিবাগ জামিয়ায় বসে ছাত্রদের প্রােগ্রাম লাজনাতুত তলাবার-(একটি ছাত্র উন্নয়নমূলক সংগঠন) কর্মসূচী তৈরি করেন, তালিবে ইলমের পথ ও পাথেয়, লিখেছেন আমার উস্তায হযরত মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা.। তবে এটা ছিল একটা মিটিংয়ের আলােচনা-পর্যালােচনার সারনির্যাস। এমন একটা মিটিংয়ের আলােচনার সার, যে মিটিংয়ে বুযুর্গ উলামায়ে কেরাম থাকতেন। সভাপতিত্ব করতেন হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.।

কাজী সাহেব রহ. ছিলেন বড় আলেম। আমরা তার কাছে হাদীস পড়েছি। তার দরসে গভীরতা ছিল। শাহ ওয়ালীউল্লাহ সত-এর ইলমের মধ্যে যেরকম গভীরতা ছিল, মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.-এর কানের মধ্যে ওরকম গভীরতা ছিল। হযরত কাশ্মিরী রহ.-এর হাওয়ালায় যখন কথা বলতেন, তখন মনে হত, যুগের কাশ্মিরী যেন সামনে বসা। আর তিনি তাে ছিলেন আশেকে মাদানী। হযরত মাদানী রহ.-এর কথা যেদিন উঠত, সেদিন তাে কাজী সাহেব রহ.-এর। চেহারার প্রফুল্লতা, ভাষার যে অলংকার এবং উপস্থাপনার যে সুন্দর প্রাণবন্ততা, সে এক ভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা হত। যখন আসত মাদানী রহ.-এর কথাগুলাে, তখন নিজের মনের কথাগুলাে হৃদয় নিংড়ে এরকমভাবে বলে যেতেন, যেন হযরত মাদানী তাঁর সামনে বসা। আর তিনি সব দেখে দেখে বলছেন। হযরত মাদানী রহ.-এর জন্য পাগলপ্রাণ। আমি আমার হায়াতে কয়েকজন লােককে দেখেছি, যারা হযরত মাদানী আলাইহির রহমার জন্য খুব বেশি পাগল ছিলেন। একজন হলেন আমার আব্ব হযরত মাওলানা মূসা রহ.। আরেকজন ফরিদাবাদ মাদরাসার সাবেক শিক্ষক হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নান দা.বা। এখনাে জীবিত আছেন। বর্তমানে রাজফুলবাড়ীয়া মাদরাসার মুহতামিম। এঁরা হযরত মাদানীর আশেক ছিলেন। হযরত কাজী সাহেব রহ. একসময় জামিয়া ইমদাদিয়া কিশােরগঞ্জে শায়খুল হাদীস ছিলেন। তখন মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর আজাল্লে খলীফা হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ. জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম, তাঁকে অনেক সম্মান করতেন।

হানাফিয়াতের উপর তার অনেক উবুর ছিল। তিনি আহলে হাদীসের মােকাবিলা করেছেন। যেটা বর্তমান সময়ে ফিতনায়ে আজীম, আমাদের দৃষ্টিতে । হাজারাে ফেতনার জন্ম দিচ্ছে। আহলে হাদীস নামের একটা গ্রুপ, বর্তমানে যারা তাকলীদকে অস্বীকার করে তারা এক পর্যায়ের স্বেচ্ছাচারিতার প্রবর্তক।

আমি মনে করি, যারা তাকলীদকে অস্বীকার করে তারা নিজের বুঝকে শরীয়তের নামে চালিয়ে দেয়। নিজের উপলব্ধিকে শরীয়তের নামে চালিয়ে দেয়। এ প্রবণতা আগের গায়রে মুকাল্লিদদের মধ্যে ছিল না। ওদের মধ্যে হাম্বলী মাযহাবের অনুকরণে যাহেরকে অবলম্বন করে কথা বলার একটা মেজাজ ছিল। তাদের সাথে আমাদের বুযুর্গরা কাজও করেছেন, এদের পিছনে নামাজও পড়েছেন, পড়িয়েছেন। হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. সেই জোয়ানকালে আহলে হাদীসের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গায় মুনাজারা করেছেন এবং সফল মুনাজের ছিলেন হানাফিয়াতের পক্ষে এবং এত জাদরেল মুনাজের ছিলেন যে, এরা যদি শুনত কাজী মুতাসিম বিল্লাহ মুনাজারা করতে আসছেন, তাহলে আর সেখানে ওরা আসত না।।

হযরত মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. ইলমের পাহাড় ছিলেন। যখন বক্তৃতা শুরু করতেন, তখন মনে হত যেন সারা দুনিয়ার উলুম ও মাআরিফ কাজী সাহেবের সামনে উপস্থিত হয়ে আছে। পাকিস্তান পিরিয়ডের কথা বলছি। ওই সময়ে বড় লিডাররা ছিল, আলেম ওলামাদের হেয় মনে করত, পাত্তা দিতো না, এবং বলত যে, ওরা উর্দূ ছাড়া কথা বলতে পারে না। এরা বাংলা জানে না। নানাভাবে এদেরকে হেনস্তা করত। ফেনীকে একবার জমিয়তে উলামার একটা সম্মেলন হল। সেখানে অনুরোধ করা হল হযরত মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহকে। তিনি দেড় থেকে দুই ঘন্টা বক্তৃতা দিলেন। উচ্চাঙ্গের পাণ্ডিত্যপূর্ণ বাংলায়। মানুষ তন্ময় হয়ে শুনছিল। এখনো এটা ইতিহাস হয়ে আছে।

পীরজঙ্গী মাদরাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান দা. বা. বলেন, এখনো নাকি ফেনীর লোকেরা সেই বক্তৃতার কথা স্মরণ করে।

কাজী সাহেবের মেহমাননাওয়াযী
এটা একটা ইতিহাস। তাঁর সাথে যতবারই দেখা হয়েছে, ততবারই এটা অনুভব করতে পেরেছি। ইসলামিয়া মাদরাসায় আমরা গেলাম।  নিজেই ফল কেটে আমাদের পরিবেশন করেছেন। একেকটা সিফাত তাঁকে জিন্দা বানিয়ে রেখেছে। আমাদের দেশে বিশেষ করে আলেম সমাজে বাংলা ভাষার প্রচলন ছিল না, বাংলা ভাষায়ও যে ইলমের রওনক সৃষ্টি করা যায়, কাজী সাহেব রহ. তাঁর দলিল ছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনেকগুলি কিতাবের অনুবাদ সম্পাদনা করেছেন। সম্পাদনা পরিষদের মিটিং হত, কাজী সাহেব সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। আমিও অনেকগুলো সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। সম্পাদনা বোর্ডের দুইজন মানুষকে আমার বেশি মনে পড়ে। একজন খতীব মাওলানা উবায়দুল হক সাহেব রহ. বাংলায় তিনি তেমন পারদর্শী ছিলেন না। তবে উর্দূ তাঁর বড় চমৎকার ছিল। একেবারে উর্দূ আদিবের মতিই তাঁর উর্দূর ব্যবহার ছিল। ইলমী চমকও ছিল দেখার মতো। শুনতেই থাকতেন, শুনতেই থাকতেন, একজন পড়ছেন, ঠিক জায়গা মতো তিনি বলে উঠতেন, থামুন। এই শব্দটা হয়নি। শব্দটা কী হবে না হবে, এটা তৎক্ষণাৎ তিনি বলতে পারতেন না। তখন মিটিংয়ে বলতেন আপনারা বলুন। ওই শব্দটা বালাগাতের দৃষ্টিতে ওখানে সঠিক হয়নি। শব্দটা কী হবে বলার জন্য কাজী দীন মুহাম্মদকে অনুরোধ করা হত, তিনি অনেক শব্দ বলতেন। আর এ ব্যাপারে যিনি সঠিক শব্দ বাছাই করে দিতেন, তিনি হলেন কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.। যাঁর বাংলা উর্দূ আরবী, কুরআন, হাদীস, ফিকহ সম্পর্কে তাআম্মুক, গভীরতা বেমেছাল ছিল। তাঁকে অন্যদের পক্ষে অতিক্রম করা কঠিন ছিল।

তাওয়াজু
বিনয় কাকে বলে! কাজী সাহেবের মতো বিনয়ী মানুষ দুনিয়ার লোকেরা দেখেছে কিনা সন্দেহ! ছাত্রতেও তিনি এমনভাবে কথা বলতেন, যেন তাঁর সঙ্গী কিংবা উস্তাদ। নিজেকে খুব ছোট করে রাখতেন। নিজের ছাত্রদের খুব মুহাব্বত করতেন। তাই তাঁর ছাত্ররাও তাঁকে অসম্ভব ভক্তি করত। তো ছাত্রদের প্রতি কাজী সাহেবের রহ. -এর কী শাফকত! নিজেকে ছোট মনে করা, তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ, বিনয়ের সঙ্গে কথা বলা- এসবই তাঁর অতুলনীয় গুন। আমি আমার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ‘শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.’ এর বইয়ের ভূমিকা লিখতে হুজুরকে অনুরোধ করে বললাম, হুজুর আমার বইয়ের ভূমিকা আপনাকে লিখে দিতে হবে।

শায়খুল ইসলাম সম্পর্কে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের মাঝে সবচেয়ে বেশি যিনি জানতেন, তিনি আমদের কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.। হযরত শায়খুল ইসলাম রহ. এর অনেক শাগরেদ বাংলাদেশে আছেন, কিন্তু কাজী সাহেব রহ. তাঁর সম্পর্কে বেশি জানতেন। তার ইলমে জাহের, ইলমে বাতেন, তাঁর সিয়াসাত, তাঁর কালচার, তার মনমানসিকতা, চিন্তা সম্পর্কে কাজী সাহেব রহ. ছিলেন সবচেয়ে প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ ব্যক্তি। তাে, আমি বললাম যে, হুজুর আমার বইয়ের ভূমিকা আপনাকে লিখে দিতে হবে। হুজুর বললেন, অবশ্যই আমি লেখব। লিখতে বসেছেন তাে কলম চলল। ওই ভূমিকা দুই ভলিয়মের এক বিরাট বই হয়ে গেল। আর প্রথম বাক্যটা তিনি আমার নাম বলে এভাবে আনলেন যে, ‘আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু জনাব মাওলানা মুশতাক আহমদ আমাকে হুকুম করেছেন যে, তােমাকে ভূমিকা লিখে দিতে হবে।’

আমি তাঁর শাগরেদ, তাঁর গােলাম। কিন্তু আমার নাম এমনভাবে নিয়েছেন যে, কেউ পড়ে এ ধারণা করতে বাধ্য যে, আমি হুজুরের সঙ্গী, নয়তাে বড় কেউ একজন। অথচ আমি তার নগণ্য ছাত্র। কিন্তু আমাকে তিনি বড় বানিয়ে দিলেন। এটা আমার মহব্বতে নয়। হযরত শায়খুল ইসলামের মহব্বতে। আমি হযরত শায়খুল ইসলামের জীবনীর উপর কাজ করলাম তাই আমাকেও বিশাল বানিয়ে দিলেন। কাজী সাহেব রহ. ছিলেন এক বেমেছাল ব্যক্তিত্ব।

আমার মনে হয় যে, কাজী সাহেবের উদাহরণ দুনিয়া খুব কমই পেশ করেছে। এই উদাহরণ দুনিয়া আবার পাবে কিনা আল্লাহ পাকই ভালাে জানেন। আল্লাহ তাকে কবুল করুন। তার আওলাদ-ফরজন্দকে, ছেলেদেরকে, ছাত্রদেরকে কবুল করুন। হযরত মুরীদ করতেন না। অথচ তিনি পীরে কামেল ছিলেন। অনেক বড় পীর ছিলেন। বুযুর্গ ছিলেন। হযরত কাজী সাহেব রহ. মাদানী রাহিমাহুল্লাহর হাতে বায়আত ছিলেন। তার আশেক ছিলেন। চিন্তার প্রতীক ছিলেন। চিন্তা-চেতনার হামেল ছিলেন। তাঁর চেতনার দাঈ ছিলেন। আর খেলাফত পেয়েছেন মাদানী রহ.-এর খলীফা সিলেটের তাজাম্মুল আলী রহ.-এর কাছ থেকে। কাজী সাহেব রহ. পীর মুরীদির লাইনে কাজ করেননি। করতে পারেননি। মেজাজের মধ্যে ছিল না। তিনি ছিলেন উঁচুমানের একজন মুদাররিস।
আল্লাহ পাক হযরত কাজী সাহেব রহ.-এর দারাজাত বুলন্দ করে দিন। তার সকল ছাত্রকে কবুল করে নিন। কাজী সাহেব রহ. এখনাে চোখের সামনে হাজির । ইন্তেকালের পরে একাধিকবার স্বপ্নে যিয়ারতও আল্লাহ পাক নসীব করেছেন। উস্তাদের হকও আদায় করতে পারিনি। যারা আমার সঙ্গী, কাজী সাহেব রহ.-এর শাগরেদ, আমাদের বন্ধু হুজুরের নামে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের কাজে এগিয়ে এসেছেন। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। শােকর আদায় করি।

মালিবাগ মাদরাসা উম্মুল মাদারিস ঢাকায়। সেখানে আমাদের বান্ধু-বান্ধবরা আছেন। আমাদের সিনিয়র সাথীরা আছেন। আমাদের মুরব্বিরা আছেন। মুহতামিম সাহেব, নায়েবে মুহতামিম সাহেব আছেন, আরাে একজন মানুষ ছিলেন। নাযেম সাহেব; মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর সাহেব, তাকেও স্মরণ রাখা উচিত। এ মাদরাসা একটা ছােট্ট মসজিদ ছিল। তিনিই কাজী সাহেব রহ.-কে নিয়ে এসেছেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ.-কে এনেছেন। আমার এখনাে সেই দৃশ্য মনে পড়ে যে, মালিবাগ মাদরাসা ছোট্ট একটা বিল্ডিং, মসজিদের নির্মাণ কাজও তখনাে সমাপ্ত হয়নি। আমাদের লাজনার প্রোগ্রাম। দূর-দূরান্ত থেকে লােকেরা আসছে। আমি চিটাগাং থেকে এসেছি। হাটহাজারী মাদরাসা তখন পড়ি। খুব বৃষ্টি। আর সেই মিটিংয়ের মধ্যে হাফেজ্জী হুজুর রহ.-কে দাওয়াত করা হয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর রহ. আসছেন। বৃষ্টির কারণে পানি জমে গেছে। মাদরাসার কাছাকাছি এসে থেমে গেছেন। আসতে পারছেন না। মালিবাগ মাদরাসায় তখন বাজারের ভেতর দিয়া রাস্তা হয়নি। তখন মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর সাহেব দা.বা. জোয়ান মানুষ। তাঁকে দেখলাম, হাফেজ্জী হুজুর রহ.-কে কোলে করে মাদরাসায় নিয়ে আসছেন। তার অনেক অবদান আছে মালিবাগ মাদারাসায়। আমার ভাই মাওলানা আনােয়ার শাহ, বর্তমান নায়েবে মুহতামিম। তারও অনেক বড় অবদান আছে। আল্লাহ পাক তাকে আরাে ইজ্জত দান করুন। কাজী সাহেব হুজুর রহ.-এর ছায়ার মতাে ছিলেন। তিনি কাজগুলাে দক্ষতার সাথে, বিজ্ঞতার সাথে চালিয়ে গেছেন।

আমার উস্তায মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.-কে আল্লাহ পাক জান্নাতের আ'লা ইল্লিয়্যীন দান করেন। জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করেন। কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ পাক তার উলুমে জাহেরী উলুমে বাতেনীর ফায়জান জারি রাখুন। তাঁর সিলসিলাকে আল্লাহ পাক কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম রাখুন। আমীন।

(২০১৭ সালে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘শায়খুল হাদীস আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. স্মারক গ্রন্থ’ থেকে নেয়া।)

লেখক : শায়খুল হাদীস, জামিয়া ইসলামিয়া রেলওয়ে স্টেশন, তেজগাঁও ঢাকা।
অনুলিখনে: মাহদী আব্দুল হালিম

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ