আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: যতটুকু মনে পড়ে, কাজী মু'তাসিম বিল্লাহ রহ.-এর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৫৯ সালে। ঢাকা বড়কাটারা মাদরাসায়। তিনি অফিসে বসে ছিলেন। ঘটনাক্রমে আমি আফিস কক্ষে যাই এবং সেখানেই তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়।
আলাপচারিতায় জানতে পারি, বছরখানিক পূর্বে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে পড়াশােনা শেষ করে এসেছেন। এক বছর লাউড়ী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। এরপর তিনি বড় কাটারা মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে যােগদান করেন।
আমি তখন চলে যাই লাহাের জামিয়া আশরাফিয়ায়। সেখানে এক বছর দাওরায়ে হাদিস পড়ি। পরের বছর আবার বুখারী শরীফ সামায়াত করি। ফুন্নাতের কিছু কিতাব পড়ি। আমি সেখানে মােট দুই বছর ছিলাম।
৬১ সালের শেষ ভাগে দেশে ফিরে আসি। লাহাের জামিয়া আশরাফিয়া থেকে ফিরে এসে আমি সর্বপ্রথম কিশােরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যােগদান করি। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হওয়ার হিসাবে কাজী সাহেব আমার দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন।
আমি জামিয়া ইমদাদিয়ায় শিক্ষক হওয়ার পূর্বে কাজী সাহেব শিক্ষক হিসাবে যােগদান করেছিলেন। আমি সেখানে যাওয়ার পর তার সাথে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি খুব মিশুক মানুষ ছিলেন। সবার সাথে হাস্যরস করতেন। আন্তরিক আচরণ করতেন। আমার সাথে খুব বেশি বেতাকাল্লুফ ছিলেন। বয়সে বড় ছিলেন তাই আমাকে খুব মহব্বত করতেন।
ইলমী ইসতিদাদের ব্যাপারে তাকে যতটুকু জানার সুযােগ হয়েছে, তাতে তিনি খুবই যােগ্য উস্তায ছিলেন। পাঠদানে তার সুখ্যাতি ছিল। এক হল, ইলমী ইসতিদাদ থাকা, আর একটি হল, পাঠদানে সুনাম অর্জন করা। অনেকে ভালাে আলেম হয়, কিন্তু তার পাঠদান অত উন্নত হয় না।
তিনি একদিকে যেমন ভালাে আলেম ছিলেন, অপরদিকে তার পাঠদানও সুখ্যাতি লাভ করেছিল। এছাড়া আধ্যাত্মিক লাইনে তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর হাতে বায়আত হয়েছিলেন।
এরপর মাদানী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা হযরত মাওলানা তাজাম্মুল আলী তাকে খিলাফত দিয়েছিলেন। কিশােরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ায় থাকাবস্থায় মাঝে মধ্যে এ তাজাম্মুল আলী সাহেব সেখানে আসতেন। তার কাছ থেকে আমরা নসিহত হাসিল করতে মাওলানা মু'তাসিম বিল্লাহ রহ, শায়খ তাজাম্মুল আলী সাহেবের প্রতি অত্যন্ত মহব্বত থেকে করতেন।
শায়খের আশেক ছিলেন। এছাড়া জাগতিক বিষয়েও তার অপ্রতুল জ্ঞান ছিল। এক সময় তিনি জমিয়তের সাথে সংযুক্ত থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে এলেও দৈনন্দিন পত্রপত্রিকা পড়ে রাজনীতি ও দেশের হালচাল সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতেন।
সবশেষে বলি, তার আমল-আখলাক ছিল নজিরবিহীন। নামায পড়তেন খুশু-খবর সাথে। অন্যের যােগ্যতার খুব মূল্যায়ন করতেন। নিজেকে বড় মনে করে কারো সাথে যেনতেন ব্যবহার করতেন না।
কাজী সাহেব তার সময়ের বড় মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদীস ছিলেন। উন্নত আখলাকের অধিকারী, সাদাসিধে জীবনযাপনকারী এবং সুন্নতে নববীর আমলী নমুনা ছিলেন। আল্লাহ তাঁর জীবন থেকে আমাদের ফায়দা হাসিল করার তাওফীক দান করুন। তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে পৌঁছিয়ে দিন। আমিন।
লেখক: শায়খুল হাদীস ও মুহতামিম, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭
অনুলেখক: শিবলী নােমানী
-ওআই/আবদুল্লাহ তামিম