বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তিনি ছিলেন আকাবিরের প্রতিচ্ছবি: মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হােক রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। রহমত বর্ষিত হােক উম্মতের ঐ সকল মনীষীর ওপর, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে ইলমে ওহী এবং ইসলাম নবীজির দেড় হাজার বছর পরেও আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। ঐ সকল মনীষীর মাঝে আমরা খুব নিকট অতীতে হারিয়েছি আল্লামা কাজী মু'তাসিম বিল্লাহ রহ.কে। তিনি ছিলেন উলামায়ে কেরামের অহংকার, উপমহাদেশের শীর্ষ বুযুর্গ এবং উম্মাহর ফিকিরে নিমগ্নপ্রাণ এক ক্ষণজন্মা আলেমে দীন। বহুগুণের সমাহার ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের মাঝে। অনেক কিছুতেই স্বাতন্ত্র ছিল তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন।

তাঁর সাহচর্য গ্রহণের সুযােগ হয়ে উঠেনি। স্বল্প সংশ্রব ও একান্তজনদের বিবরণ থেকে এই মনীষীকে যেভাবে জানতে পেরেছি তাতে মনে হয়েছে তিনি অনেক কিছুতেই স্বতন্ত্র ছিলেন। তাঁর হাঁটা, কথা বলা, তাকানাে, হাসি-রসিকতা, মুতালা, কুরআন তিলাওয়াত, নামায, দোয়া, পাঠদান পদ্ধতি, একান্ত আলাপচারিতা, আন্তরিকতা ও ভালােবাসার বহিঃপ্রকাশ সব ছিল অন্যরকম বৈশিষ্ট্যের।

তিনি স্বাধীনচেতা ও উদারমনা মানুষ ছিলেন। ইলমের খেদমত, দীনী দূর্গ বা মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উৎসাহদান, সামাজিক উন্নতি ও খেদমতে খালকে নিয়ােজিত থাকা, সহীহ আকীদা সংরক্ষণ ও বিস্তার প্রভৃতি কাজ করাকে তিনি জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছিলেন। দেওবন্দিয়াতের নীতি ত্যাগ না করার পক্ষে ছিলেন।

তাঁর শায়খ হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর মুত্তাহিদা কওমিয়্যাত বা একজাতি তত্ত্বকে নিজের জীবনের মূলনীতি বা কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। শিক্ষাজীবনের শুরুতে আলিয়া মাদরাসায় পড়াশােনা করলেও তৎকালীন। মালিয়ার বুযুর্গ মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে তিনি ভালাে ছাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি উলুম দেওবন্দে শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর কাছে হাদীসের ইলমের সাথে সাথে ইলমে তাসাউফও অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করলেও পরে জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগসহ বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন।

কওমী আলেমদের মাঝে যারা লেখালেখির কাজ করেন তাদের অনেকে হযরতের হাতে গড়া এবং তাঁর চেষ্টা ও চেতনার ফসল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি শিক্ষকতা করেছেন, যদিও সেখানে বেশি দিন থাকেননি। যতটুকু জানি, যশখ্যাতি পদবী বিমুখ মানসিকতার কারণেই সেখান থেকে চলে এসেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। তিনি কারাে নিন্দাবাদে বা প্ররােচনায় আর্দশ ও অবস্থান থেকে সরে আসতেন না। আরাে বেশি অবাক হয়েছি এ কথা জেনে যে তার মতো দেশখ্যাত শাইখুল হাদীস ও মুহতামিমের ওপর কোনদিন জাকাত ফরজ হয়নি।অর্থাৎ যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদও জমা রাখেন নি।

মালিবাগ জামিয়ার ৩০ সালা দস্তারবন্দি মাহফিলে পাশে বসে বয়ান করার সময় মনে হয়েছে আমাদের মুরুব্বী ও অভিভাবক পাশে আছেন। সুতরাং নির্ভয় কথা বলা যায়। আবার মনে হয়েছে না জানি কোন ভুল করে বসি। এছাড়া বিভিন্ন সাক্ষাতে আনন্দ-আতঙ্কের দোলাচলে দোল খেয়েছি। সুন্নতের অনুসারী এবং আআকাবির আসলাফের প্দাঙ্ক অনুসারী এ মহান ব্যক্তির সামনে বাতিল যে রূপ ধারণ করে আসতো তিনি ধরে ফেলতে সক্ষম ছিলেন।

ফেরাকে বাতেলার সকল দল সম্পর্কে তাঁর ছাত্র ও মুহিব্বীনদের সবসময় সতর্ক করতেন। মওদুদী মতবাদ-এর বিরুদ্ধে এক আতঙ্ক মূর্তির নাম আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.। ইলম ও আমলের এই নীরব সাধকের বিদায়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে যা পূরণ হওয়ার নয়। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে নিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের হযরত সাহেব রহ.- এর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং আমাদের জন্য যোগ্য অভিভাবক তৈরি করে দেন। আমিন।

(২০১৭ সালে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘শায়খুল হাদীস আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. স্মারক গ্রন্থ’ থেকে নেয়া।)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ