মুহা.আবুল খায়ের গৌহরী
তিনি আল্লাহ। যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন নরম মাটি দিয়ে। জিনদের সৃষ্টি করেছেন আগুন দিয়ে। তিনি আল্লাহ। যিনি আকাশ থেকে আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তারপর তা দ্বারা উদ্ভিদের চারা উদগত করেন। তারপর তা থেকে সবুজ গাছ-পালা জন্মান।
তিনি সূর্যকে রশ্নিময় করেছেন।চন্দ্রকে করেছেন জৌতিময়। আর নক্ষত্রকে করেছেন জল ও স্থলের অন্ধকারে পথ চলার মাধ্যম। তিনি রাতকে পোশাক স্বরূপ বানিয়েছেন। ঘুমকে শান্তিময় করেছেন। আর দিনকে বানিয়েছেন জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম।
তিনি জমিনকে বিছানা বানিয়েছেন, গৃহকে আবাসস্থল বানিয়েছেন, পাহাড়-পর্বতকে বানিয়েছেন আশ্রয়স্থল, আর নদ-নদীকে করেছেন আমাদের সেবায় নিয়োজিত।
তিনি আমাদের জন্য উদ্যানরাজি, খেজুরবীথি,আঙ্গুরের থোকা, যায়তুন-আনার ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি বীজ থেকে শস্য বের করেন। প্রাণহীন বস্তু হতে বের করেন জীবন্ত প্রাণী। আর প্রাণীকে করেন নিষ্প্রাণ। পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়ায় যতসব জীব, আকাশে উড়ে বেড়ায় যত রঙ-বেরঙের পাখি,চারপায়ে চলা দুধের গাভী, মাটির সাথে মিশে থাকা সাপ-বিচ্ছু সবই সেই মহান আল্লাহর সৃষ্টি।
তিনি আল্লাহ। তিনি আমাদের সবকিছু দান করেছেন। তারই দানে আমরা বেঁচে আছি। এই যে আকাশের নীলিমা, রাতের পূর্ণিমা, কোকিলের কুহুগান, বাতাসের সুরভি, ঘাসের সবুজতা, ফুলের সুবাস,সন্ধ্যার লালিমা,বৃষ্টির রিমঝিম,মেঘের আলপনা, চাঁদের জোসনা, তারকার ঝিলিমিলি, আলোর ফোয়ারা, পাহাড়ের ঝর্ণা,শস্যের শ্যামলতা, জোনাকির আলোকসজ্জা, সবুজ অরণ্য ও তার জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি সবই তাঁর দান।
তিনি আল্লাহ। যিনি আমাদের ফল দিয়েছেন, ফুল দিয়েছেন,আর দিয়েছেন গাছের ছায়া।
তিনি আমাদের দিয়েছেন নদী-ঝর্ণা, পাহাড় -পর্বত, স্বচ্ছ-শীতল সরোবর, আর দিয়েছেন মেঘ-বৃষ্টি-বাদল। তিনি আমাদের দিয়েছেন সূর্যের আলো। তারার মেলা। ভোরের শিশির। বসন্তের ফুল। পাখির গান আর ঝর্ণার কুলকুল ধ্বনি।
তিনি আল্লাহ। তাঁর নামের খুশবুতে দেওয়ানা সারা দুনিয়া। তাঁর প্রেমে দিন রাত ফিরে আসে। তারঁ নামে আকাশ বৃষ্টি ঝরায় অঝোরে। পাখির কণ্ঠে তারঁ গুনগান শোনা যায়। তাঁর প্রেমে সারা দিতে নদী ছুটে বহুদূর। তারঁ নামে সাগরে উঠে তরঙ্গ।
নদীর জলে শোনা যায় তারঁ কলতান। তাঁর প্রেমে আকাশে পাখি ডানা মেলে উড়ে। ঝর্ণারা গানে গানে বয়ে চলে তাঁর নামে। সবখানে শোনা যায় তারই শ্লোগান।
তিনি আল্লাহ। তাঁর নামে ভেসে যায় সুর অফুরান। তাঁর নামে ছুয়ে যায় দয়া-অফুরান। পাখিদের গানে ভেসে যায় তারঁ সুর। সবখানে দয়া তারঁ সদা বহমান। তিনি আল্লাহ। তাঁর হুকুমেই পরিচালিত হয় এ -জগত। এ- জগতের সবকিছু।
এই যে গাছে গাছে ফুল ফুটে। ডালে ডালে ফল ধরে। মাঠে মাঠে সোনালি ফসল ফলে। নীল আকাশে শুভ্র বলাকা উড়ে। সাগর তীরে আছড়ে পড়ে ঢেউ। বাগানে গোলাব-চ্যামেলী -রজনীগন্ধা প্রস্ফুটিত হয়। বৃষ্টি ধোঁয়া আকাশে নরম রোদের মধ্যে রঙধনু ভাসে। ফাগুনে কৃষচূড়া লাল শাড়িতে নববধু সাজে। এই যে সন্ধ্যার আকাশে জোনাকিরা কণা কণা আলো হয়ে উড়ে। সবকিছুই তারঁ হুকুমে হয়।
তিনিই আল্লাহ। যিনি ইবরাহীম আ.-এর জন্য নমরুদের আগুনকে শান্তিদায়ক বানিয়ে ছিলেন। নুহ আ.ও তার সাথীদেরকে মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। আইয়ুব আ.কে মহারোগ থেকে আর যাননুন আ.কে কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। পর্বতমালাকে দাউদ আ.-এর অধীন করে দিয়েছিলেন। বার্ধক্যে ইবরাহীম আ.-কে পুত্র সন্তান দান করেছিলেন। আর ইসা.-কে সহীহ সালামতে আসমানে তুলে নিয়েছিলেন।
তিনি আল্লাহ। যিনি পিতামাতা ছাড়া আদম আ.কে, আর পিতা ছাড়া ইসা আ.-কে জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি উযায়ের আ.-কে মৃত্যুর একশত বছর পর জীবিত করেছিলেন। আর আসহাবে কাহ্ফের সাত যুবককে গুহায় তিনশত বছর ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন।
তিনি আল্লাহ। যিনি দুঃখ -কষ্ট দূর করেন। বিপদে -আপদে সাহায্য করেন। ক্ষুধায়-অভাব-অনটনে নুসরাত দেন। রোগ-ব্যাধী থেকে শিফা দেন। যালিমের যুলুম দমন করেন। মজলুমকে সাহায্য করেন। তিনি আল্লাহ! তিনি সর্ব জ্ঞানী আল্লাহ!! তিনি সর্ব শক্তিমান আল্লাহ!!! তিনি অসীম দয়ালু আল্লাহ!!! তিনি ক্ষমতাশীল আল্লাহ!!! মহা-মহীয়ান আল্লাহ!!! তিনি চির-জীবন্ত চিরস্থায়ী!!!
সুখে-দুখে আমরা তারই প্রশংসা করি। বিপদে -আপদে আমরা তাকেঁই ডাকি। অভাব -অনটনে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা, ফাযিল, মাদরাসাতুল উলূম দারুল হাদীস হরিপুর,জৈন্তাপুর, সিলেট।
-এটি