বিনয়ামীন সানিম।।
ইসলামি দৃষ্টিতে ধূমপান নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকগনসহ সর্বজনস্বীকৃত, ধূমপান যক্ষা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানান রোগের অন্যতম কারণ। স্বয়ং প্যাকেটের গায়ে-ই লেখা থাকে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপান মৃত্যু ঘটায় ইত্যাদি। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতিবছর ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়।
সুতরাং এটি আত্মহত্যার শামীল, মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। আর ইসলাম তা কখনোই সমর্থন করে না। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা৷ (সুরা বাকারা, আয়ত: ১৯৫)
ধূমপানে নেশা হয়, যদিও কম। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানে নেশা হতে বাধ্য। আর ইসলামি শরীয়া মতে 'যে জিনিস অধিক সেবনে নেশার উদ্রেক করে, সে জিনিসের পরিমান কম হলেও তা হারাম'। (তিরমিজি : ১৮৬৫) রাসুল সা. নেশাজাতীয় বস্তু নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন, 'যাবতীয় নেশার বস্তু হারাম'। ( মুসলিম : ২০০৩)
ধূমপান অপব্যয় বৈ কিছুই নয়। ধূমপানজনিত ব্যয় একজন মানুষের আর্থিক অপচয়ের বড় একটি মাধ্যম। তাছাড়া ধূমপানজনিত রোগের চিকিৎসার পেছনে আরও কয়েক গুণ বেশি অর্থ অপব্যয় হয়। অথচ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমারা কিছুতেই অপব্যয় করবে না। নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬-২৭)
ধূমপানের ধোঁয়ায় পার্শ্ববর্তী ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কষ্ট পায়। নবী করীম সা. বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়'। (সহিহ বুখারি: ৫১৮৫)
গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান। ২০১০ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২টি দেশে পরিচালিত একটি গবেষণার প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ অ্যাজমা ও নিউমোনিয়াসহ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার হল শিশু। (উইকিপিডিয়া)
ধূমপান পুষ্টিকর কিংবা ক্ষুধানিবারক কিছুই নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের খাদ্য প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলেন, এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না, ক্ষুধাও নিবারণ করবে না। (সুরা গশিয়াহ, আয়াত: ৭)
অতএব, প্রত্যেক ধূমপায়ীদের উচিত অতিদ্রুত এই বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করা। আর এর জন্য প্রয়োজন, ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি। চলছে পবিত্র মাহে রমজান, তাকওয়া অর্জন ও আত্মশুদ্ধির মাস। নিজেকে পরিবর্তন করার মাস। সুতরাং রমজান মাস-ই ধূমপান বর্জনের উপযুক্ত সময়। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুক, আমিন।
লেখক: শিক্ষক, দারুল উলুম আশ্রাফিয়া মাদরাসা ভোলা।
-এটি