বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট: ব্রাজিলে তরুণদের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ব্রাজিলের করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম অংশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করা রোগীদের অধিকাংশই ছিল বয়স্ক। তবে, নতুন বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল এই মহামারির সবচেয়ে খারাপ দিনগুলো দেখছে। উদ্বেগজনক খবর হলো, করোনার তীব্র সংক্রমণের মধ্যে দেশটিতে অধিকাংশ তরুণরাই করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন।

দেশটির বেশ কয়েকজন আইসিইউ চিকিৎসক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ব্রাজিলে করোনার সর্বশেষ ঢেউয়ে কম বয়সীরা আগেরবারের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

রিও ডি জেনিরোর একটি পাবলিক হাসপাতালের ৩৩ বছর বয়সী আইসিইউ চিকিৎসক ডা. পেদ্রো আর্চার বলেন, ‘আমাদের ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কোভিড আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় অন্যবয়সী কোভিড রোগীরা সুস্থ আছেন। এটিই নতুন ঢেউয়ের সঙ্গে আগেরবারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য।’

ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে প্রতিদিন মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা আগের রেকর্ডগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সিএনএন জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি রাজ্যের একাধিক হাসপাতাল জুড়ে প্রায় এক ডজন আইসিইউ ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, হাসপাতালের আইসিইউ বেডে এখন আগের চেয়ে বেশি তরুণরা ভর্তি হচ্ছেন।

জানুয়ারিতে আমাজোনিয়ান শহরের মানসাউসের একটি পাবলিক হাসপাতালের কাছে সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন আইসিইউ চিকিৎসক ডা. লুয়ান মাতোস ডি মেনেজেস। তিনি বলেন, ‘আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি। আপনি বলতে পারেন, এখনকার রোগীদের অবস্থা অনেক বেশি গুরুতর।’

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের বয়স উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এক বিশ্লেষণে জানায়, গত তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া রোগীদের প্রায় ২৭ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৫৯ বছর, যা ডিসেম্বরের আগের সময়ের চাইতে সাত শতাংশ বেশি।

এএফপি একই সময়ের মধ্যে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সাত শতাংশ কমেছে বলে জানায়। ব্রাজিলের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য সাও পাওলোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই মাসের শুরুর দিকে জানান, দেশজুড়ে চিকিত্সকদের কাছ থেকে পাওয়া ডেটা থেকে তরুণদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের তীব্রতা সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কম বয়সী কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগীরই আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হয়েছে, যা মহামারির শুরুর সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। সিএনএন জানায়, ২৮ বছর বয়সী গ্র্যাসিয়ান দা সিলভা অসুস্থ হওয়ার পর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে মারা যান। রিও ডি জেনিরোর হাসপাতালে মৃত্যুর সময় তিনি একা ছিলেন।

সিএনএন জানিয়েছে, ব্রাজিলে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যু উভয়ই বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ব্রাজিলে কমপক্ষে একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পি.ওয়ান নামে পরিচিত নতুন ওই ভ্যারিয়েন্ট ব্রাজিলেই প্রথম শনাক্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানান। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টটি আগেরটির তুলনায় আরও দুই দশমিক দুই গুণ পর্যন্ত বেশি সংক্রামক।

জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ফিয়োক্রুজ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিলের আটটি রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ছয় রাজ্যের কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পি-ওয়ান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্টেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট তরুণদেরই বেশি আক্রান্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ