ইয়াহইয়া বিন আবু বকর: বিনা অপরাধেই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জেল খাটছেন সৌদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও বিশ্বনন্দিত দায়ী শায়খ খালেদ আল রাশেদ। কিছুদিন পূর্বে তাঁর জেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত সৌদি প্রশাসন তাকে মুক্তি দেয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরালোভাবে তাঁর মুক্তির দাবী জানিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিচ্ছে।
আলম টিভি নেট ও সৌদি এ্যারাবিয়া থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম টাইমস’ পত্রিকা গত বুধবার (১৭ মার্চ) জানায়, ‘معتقيلي الرأي’ (মুতাকিলির রায়ী) নামক এক টুইটার একাউন্ট এক টুইটে শেখ খালিদ আল-রাশেদকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শায়েখ খালেদ রাশেদ কারাগারে ১৫ বছরেরও বেশি সময় কাটানোর পরও বিনা অপরাধে তাকে আটক করে রেখেছে সাঊদ পরিবার।
২০০৫ সালে শেখ খালেদ আল রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর অপরাধ ছিলো, ‘ইয়া উম্মাতা মুহাম্মাদ’ (হে মুহাম্মদের উম্মাত) শিরোনামে তাঁর ঐতিহাসিক বক্তব্য। ডেনমার্ক যখন হুজুর সা. এর শানে বেয়াদবীমূলক কার্টুন তৈরী করে পত্রপত্রিকায় প্রচার করেছিলো, তখন তিনি এর প্রতিবাদে উল্লেখিত শিরোনামে বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আর এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বক্তৃতার মধ্যে তিনি ডেনিশ দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি সরকার এ দাবী না মেনে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে গ্রেপ্তার করে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। কিছুদিন পূর্বে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাকে এখনও মুক্তি দেয়নি।
টুইটে শায়েখ খালেদ আল রাশেদের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে মন্তব্য করা হয়েছে যে, অন্যায়ভাবে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড শেষ হয়েছে। অথচ এখনো তিনি নির্বিচারে আটক রয়েছেন। এছাড়াও একাধিক টুইটে অন্যরাও মানবাধিকার রক্ষকদের নিকট তার মুক্তির দাবীর আহ্বানে অংশ নেওয়ার ও সৌদি কর্তৃপক্ষের উপর চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যেভাবে তিনি গ্রেপ্তার হোন: ২০০৫ সালে ডেনমার্কের কিছু চিত্রশিল্পী আল্লাহর রাসূল সা. এর শানে বেয়াদবিমূলক কার্টুন বানালে তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে দুনিয়ার মুসলিমকে বিশ্বের সকল মুসলিম সরকার, বিশেষকরে সৌদি আরবের সরকারের কাছ ডেনমার্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি রিয়াদে সরকারি সদর দপ্তরের সামনে মানববন্ধন করার আহ্বান জানান। তাঁর মর্মস্পর্শি বক্তব্যে দেশজুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। জেগে ওঠে জনগন। কেঁপে ওঠে সাঊদ রাজবংশের প্রাসাদ। এর কয়েক ঘন্টা পরেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি হয়।
প্রথমে তাকে ৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। অতঃপর তার পরিবার সাজার মেয়াদ কমানোর উদ্দেশ্যে আপিল করলে বিচারক সালেহ আজিরি রাগ হয়ে তার বিরুদ্ধে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের ঘোষণা করে।
নির্যাতন: কারাগারে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাশেদ জানায়, তার পিতাকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জন্য অর্থায়নের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। নামাজের জন্য অজু পর্যন্ত তাকে করতে দেয়নি। প্রথমে রিয়াদের এক কারাগারে তার প্রতি এই অমানবিক জুলুম চালানো হয়। এরপর তাকে অন্য জেলখানায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে শুরু হয় তার প্রতি অমানবিক নির্যাতন ও নীপিড়নের এক কালো অধ্যায়। চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে বেহুশ হয়ে গেলেও নির্যাতন বন্ধ হতো না। ক্লান্ত হয়ে কখনো ঘুমিয়ে পড়লে চাবুকের ঘা লাগিয়ে জাগানো হতো।
২০১৮ সালের শেষের দিকে একবার তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সৌদি প্রশাসনের জিন্দানখানায় শুধু তিনিই নন, ‘শায়েখ মুহাম্মাদ আল আরিফি’, ‘শায়েখ আল রাজি’, ‘সাইয়্যিদ হুসাইন আন নামির’ প্রমুখের মত আরো বহুসংখ্যক দায়ী ও উলামায়ে কেরাম বছরের পর বছর বন্দী রয়েছেন। শায়খ খালেদ আল রাশেদের মতো তারাও বিভিন্ন জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
এমডব্লিউ/