মাহমুদুল হাসান
বিশেষ প্র্রতিনিধ>
হজরত মাওলানা শামছুল ইসলাম রহ.। আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের প্রবীণ মুহাদ্দিস। ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের অন্যতম খতিব। হাজারও আলেমের শিক্ষক। হবিগঞ্জের বাহুবলে বাড়ি হলেও জীবনের প্রায় ৪০ বছর কেটেছে কিশোরগঞ্জে। এই শহরের মাটি ও মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর মতো তুখোড় আলেমের অভাব এই অঞ্চলের মানুষেরা অনুভব করবে বহুকাল।
মাওলানা শামছুল ইসলাম রহ. পরিচিত ছিলেন ‘মুফাসসির সাহেব হুজুর’ হিসেবে। শহীদি মসজিদে সপ্তাহে একদিন তাফসির করতেন। শহরের অনেক মুসল্লি মুখিয়ে থাকত তাঁর তাফসির শোনার জন্য। শুনেছি সম্প্রতি তিনি পুরো কুরআনে কারিমের তাফসির সম্পন্ন করেছেন।
জন্ম
মাওলানা শামসুল ইসলাম হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন স্বস্তিপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালের ১ লা মার্চ জন্ম গ্রহন করেন।
তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মুর্তজা আলী সাহেব।
প্রাথমিক শিক্ষা
পুটিজুরি ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।
অতঃপর মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য চলে যান নবীগঞ্জ থানাধীন দিনারপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায়।
মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্যেশ্যে তিনি চট্রগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাট হাজারী মাদরসায় গমন করেন। সেখানে কয়েক বছর অবস্থান করে সেখানকার মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগনদের থেকে হাদীস ও তাফসীর বিষয়ে বিশেষ পান্ডিত্য অর্জন করেন। প্রখর মেধা ও ধী শক্তির কারনে তিনি অতি অল্প সময়ে উস্তাদদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন এবং তাদের সু দৃষ্টি অর্জন করেত সক্ষম হন। তিনি ১৯৮৯ সালে ভারতে এক শিক্ষা সফরে গিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দ এর উস্তায আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী এবং সাঈদ আহমদ পালনপুরী দাঃ বাঃ প্রমুখ বিজ্ঞ আলেমদের থেকে হাদীসের সনদ লাভ করেন।
কর্ম জীবন
তাঁর কর্ম জীবন শুরু হয় হবিগঞ্জ থানাধীন বাহুবল কাসেমুল উলূম মাদরসার মুহাদ্দিস হিসবে যোগদানের মাধ্যমে।
অতঃপর ১৯৮৩ সালের ১ল আগষ্ট কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। এর পর থেকে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ অতন্ত দক্ষতার সাথে হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যাপনার কাজ চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি জামিয়া ইমদাদিয়া ও সিলেঠের জামিয়া মাহমুদিয়া মাদরসার শাইখুল হাদীস।
তার উস্তাদ
তার উল্লেখযোগ্য উস্তাদ হলেন হাট হাজারীর শাইখ আব্দুল কাইয়ম,শাইখ আব্দুল আযিয, শাইখ আবুল হাসান প্রমুখ।
তিনি প্রভুর অশেষ কৃপায় হজ্জ্বে বাইতুল্লাহ তিনবার আদায় করেছেন।
আল কোরানের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ইলমে তাফসীরে রয়েছে বেশ দখল। তাই তিনি অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকে ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদে ১৯৯৩ সাল থেকে আজ অবধি নিয়মিত তাফসির করে আসছেন।
সুর ফাতেহা থেকে শুরু করে বর্তমানে তিনি সূরা ইকরা পর্যন্ত তাফসির সম্পন্ন করেছেন। সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে পুরো কোরআন শরিফের তাফসির সম্পন্ন হলে সবাইকে নিয়ে দোয়া আয়োজন করবেন বলে তার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। তার তাফসিরেও হাজারো মহিলা দ্বীনের পথে ফিরে এসেছেন। এ জন্য কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যমনি হিসেবে সবাই তাকে সমীহ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে যান।
-এটি