আওয়ার ইসলাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পরিশুদ্ধ ও মার্জিত জীবন পরিচালনা করা অপরিহার্য। মানব জীবনে অনেক চাহিদা বিদ্যমান থাকে। চাহিদার কোন শেষ নেই। কোন কোন মানুষ পার্থিক জীবনের সুখ-শান্তির জন্য অনন্তকালের সফলতাকে ভুলে যায়। এদেরকে হিংসা, ক্রোধ, লালসা সহ বিভিন্ন পাপাচার গ্রাস করে ফেলে। ফলে ওই সকল মানুষ ইসলাম, মুসলমান ও কুরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও তোয়াক্কা করে না।
আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার হোফজত মহসচিব খাদিমুল কুরআন পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে নগরীর ঐতিহাসিক সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে তিনদিন ব্যাপী ২৬তম তাফসিরুল কুরআন মহাসম্মেলনে সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি বয়নে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বনবী সা. শেষ নবী। এ দুনিয়ায় আর কোন নবী আসবেন না। তাই কুরআন-হাদীসের বাণী সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া উলামা-কেরামের গুরু দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আদায় করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার সর্বত্র ঘটাতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে আজ মুসলমানের সন্তান, ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে। যা খুবই দুঃখজনক। এজন্য মানব জীবনের প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
তাফসির মাহফিলের বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী বলেন, অপরাধ প্রবণতার মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের সমৃদ্ধির কারণে পরকালীন অনন্তকালের শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশের হক্কানী উলামা কেরামের সান্যিধে এসে আত্মসংশোধনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
তাফসির মাহফিলের বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, খাদিমুল কোরআন পরিষদ সিলেটের সভাপতি ও জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, আজাদ দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খ জিয়া উদ্দিন, জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুস সুবহান, হাফিজ মাওলানা মহসিন আহমদ ও মাওলানা হেলাল আহমদ।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে তাফসির পেশ করেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আশরাফ আলী হরষপুরী, মুফতি আবুল হাসান জকিগঞ্জী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম হবিগঞ্জী প্রমুখ।
বিভিন্ন অধিবেশনে তাফসীর মাহফিল উপস্থাপন করেন খাদিমুল কোরআন পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মতিন নবীগঞ্জী, ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব ও মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ খাসদবিরী। পবিত্র কুরআন মসজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ আমীর হামজা, হাফিজ শাকিল আহমদ, হাফিজ আবু নাঈম আদনান ও হাম-নাত পরিবেশন আনোয়ার হোসাইন ও সানজিদ আহমদ।
মাহফিলে শেষ পর্যায়ে প্রস্তাবন্তান উপস্থাপন করেন খাদিমুল কোরআন পরিষদ সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল খায়ের বিথাঙ্গলী। প্রস্তাবনা সমূহ হচ্ছে- মহান আল্লাহ তাআ’লা, পবিত্র কুরআনে মজীদ, রাসূলুল্লাহ সা. ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন জাতীয় সংসদে পাশ করতে হবে।
শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলে হক্কানী উলামায়ে কেরামদের বাধা প্রদান এবং ওয়াজ মাহফিল আয়োজনে প্রশাসনের অনুমতি গ্রহণের রীতি চালু করে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনে যে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিলের নামে সকল প্রকার অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের মত বাংলাদেশেও কাদিয়ানীদেরকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। হিযবুত তাওহীদ, লা-মাযহাবী, সাদপন্থীসহ সকল বাতিল ফেরকার অপতৎপরতা কঠোরহস্তে বন্ধ করতে হবে। আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট শহরকে যানজটমুক্ত করতে ট্রাক চলাচলের জন্য শহরের বাহির দিয়ে বাইপাস রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি উপরোক্ত প্রস্তাবসমূহ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। খাদিমুল কুরআন পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত ২৬তম ৩ দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মহাসম্মেলনে উপস্থিত সকলকে আন্তরিনক মোবারকবাদ জানান। বিশেষভাবে সিলেট জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীবৃন্দ ও সাংবাদিক বন্ধুগণসহ সর্বস্তরের জনগণকে আন্তরিক কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত সকলের আশু রোগমুক্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন পরিষদের সভাপতি আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী।
-এটি