শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ২৫ নভেম্বর ‘আলেমদের নেতৃত্বেই কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব’ বইমেলায় ‘সঠিক নিয়মে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ বাংলা’-এর মোড়ক উম্মোচন সিলেটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সমাবেশ শনিবার সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলেম রাজনীতিবিদরা খালেদা জিয়াকে পেয়ে সেনাকুঞ্জ গর্বিত: প্রধান উপদেষ্টা লক্ষ্মীপুর মারকাযুন নূরে ১১ মাসে হাফেজ হল ১১ বছরের শিশু আফসার যেসব অভ্যাস নীরবে মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে বৈষম্য ও অন্যায় নির্মূলে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই: মজলিস আমীর আওয়ামীলীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান খেলাফত মজলিসের

কোরআনে নেয়ামতের বিপরীতে কঠোর শাস্তির বর্ণনা ও আমাদের শিক্ষা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী কামরুজ্জামান।।

পবিত্র কোরআনে কারিম ইসলামের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ। একইসঙ্গে এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানের প্রেসক্রিপশন। আল্লাহ এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন-এর পিছনে যে তাঁর মহান উদ্দেশ্য রয়েছে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় তা বর্ণনা করেছেন সুনিপনভাবে। সুরা আবাসার কয়েকটি আয়াত পাঠ করলে আমরা সে বিষয় পরিপূর্ণ বুঝতে পারি।

মহান আল্লাহ কিভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের কি কি নেয়ামত দান করেছেন তা কিছুটা বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে এর পরই কেয়ামত দিবসের কঠিন বাস্তবতাও বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ (২৪) ‘মানুষ যেন তার খাবারের প্রতি লক্ষ্য করে।’ অর্থাৎ অস্বীকারকারী মানুষ যেন লক্ষ্য করে তার জীবন পরিক্রমার দিকে কিভাবে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, কিভাবে তার জীবন ধারণের উপকরণ সৃষ্টি করেছেন, কিভাবে তিনি তার জন্য খাবার উৎপাদন করেছেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তা’য়ালা বিস্তারিত ভাবে বলেন أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا (২৫)
আমি পূর্ণ রুপে (আসমান থেকে) বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অর্থাৎ আমি আমার কুদরতে খুব বিরল পন্থায় মেঘ-মালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا (২৬) তারপর জমিনকে বিদীর্ণ করেছি। অর্থাৎ উদ্ভিদ উদগত করার দ্বারা জমিনকে অভিনব পন্থায় বিদীর্ণ করেছি।

(২৯)وَحَدَائِقَ غُلْبًا (৩০) وَفَاكِهَةً وَأَبًّا (৩১) وَعِنَبًا وَقَضْبًا (২৮) وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا তারপর তাতে উদগত করেছি শষ্য, সুস্বাদু আঙ্গুর, তরতাজা সবজি, যাইতুন ও খেজুর। আরো উদগত করেছি পত্র-পল্লবিত ঘন বাগান। ফলফলাদি ও ঘাস যেগুলো চতুষ্পদ জন্তুরা খেয়ে থাকে। مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ (৩২) তোমাদের এবং তোমাদের চতুষ্পদ জš‘গুলোর উপভোগের সামগ্রি হিসেবে। অর্থাৎ এগুলো আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদের উপকারের জন্য। এরপর আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন فَإِذَا جَاءَتِ الصَّاخَّةُ (৩৩) অতপর যখন الصَّاخَّةُ আসবে, হাফেজ ইবনুল কাসীর রহ. বলেন الصَّاخَّةُ কিয়ামতের একটি নাম। অর্থাৎ এমন বিকট আওয়াজ যার কারণে মানুষের কর্ণ বধির হয়ে যাবে।

يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ (৩৪) وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ (৩৫) وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ (৩৬) সেদিন লোকেরা তার আপন ভাই, মা, বাবা এবং স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পলায়ন করবে। দুনিয়াতে লোকেরা স্ত্রী ও সন্তানাদির মনোরঞ্জনের জন্য কতকিছুই না করে ! হালাল-হারামের কোন তোয়াক্কা করে না। কিয়ামতের বিভিষিকাময় পরিণতিতে লোকেরা যে তাদের

নিকট আত্মীয় ও প্রিয় ব্যক্তিদের থেকে পলায়ন করবে, এর বর্ণনা দিতে গিয়েও ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। অর্থাৎ মুহাব্বাত ও ভালোবাসার স্তর ভিত্তিক তারতম্য অনুযায়ী তাদের পলায়নের বর্ণনা দিয়েছেন। প্রথমে ভাইয়ের থেকে পলায়নের কথা বলেছেন, তারপর পিতা-মাতা, তারপর স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। কারণ মানুষ ভাইয়ের চেয়ে পিতা-মাতাকে বেশি ভালোবাসে, তার চেয়েও বেশি স্ত্রী ও সন্তানকে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা বুঝিয়েছেন কিয়ামতের ভয়াবহতা

এতই মারাত্মক হবে যে, মানুষ তার কলিজার টুকরা ও আপন সন্তান থেকে ও পলায়ন করবে।

لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ (৩৭) সেদিন প্রত্যেকে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, প্রত্যেকে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকবে।

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُسْفِرَةٌ (৩৮)সেদিন কিছু চেহারা থাকবে আলোকিত। ضَاحِكَةٌ مُسْتَبْشِرَةٌ (৩৯) হাস্যোজ্জল, আনন্দদ্বীপ্ত।
وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ (৪০) আর কিছু চেহারা থাকবে ধূলামলিন ঘোর কালো অন্ধকারাছন্ন। অর্থাৎ সেদিন লোকেরা দু ভাগে বিভক্ত হবে। একদলের চেহারা হাস্যোজ্জল, আনন্দদ্বীপ্ত ও উৎফুল্ল থাকবে।

তারা সৌভাগ্যবান তাদের সফলতার জ্যোতি তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে। আরেক দল থাকবে যারা হবে হতভাগা। জাহান্নাম যাদের জন্য অবধারিত। তাদের ব্যর্থতার গ্লানি তাদের চেহারায় প্রকাশ পাবে। এই আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন অবাধ্য পাপাচারীদের ঘাম এত পরিমান ঝরবে যে, তাদের গলা পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে। আর উপর থেকে চেহারায় ধূলাবালি পড়ে বিশ্রি দেখা যাবে।

أُولَئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ (৪২) আর এই ধুলামলিন চেহারা বিশিষ্ট তারাই হবে যারা কাফের ও পাপাচারী। কাফের বলা হয় যে আকিদাগত ভাবে অবাধ্য, অস্বিকারকারীকে। ফাজের বলা হয় যার আমল খারাপ তাকে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা বুঝাচ্ছেন যে, আকিদা ও আমল উভয় দিক থেকে অবাধ্য। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।

লেখক, প্রিন্সিপাল জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম, খতিব চকবাজার জামে মসজিদ ফরিদপুর।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ