|| হাসান আল মাহমুদ ||
সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার্থী মুহাম্মাদ শিহাব (২৫)। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া আড়াইহাজার শিবপুর মাদরাসা থেকে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে দাওরায়ে হাদিসের (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
তিনি আজ রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষা দিয়ে আসার পথে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে করে স্পটেই ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শিহাবের মাদরাসার শিক্ষক মুফতি নাজমুল ইসলাম কাসেমী সূত্রে আওয়ার ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি প্রতিবেদককে (রাত ৮টায়) জানান, শিহাবের লাশ নিয়ে এখন তার গ্রামের বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স রওনা হয়েছে।
এর আগে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে শিক্ষক মুফতি নাজমুল ইসলাম কাসেমী বলেন, বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে মসজিদে আসার সময় নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ এর মাঝামাঝি ট্রাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, শিহাব হোন্ডায় ছিলো। হেলমেট ভেঙ্গে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যবরণ করেন।
শিক্ষক বলেন, শিহাব আমাদের প্রথম ফারেগিনের একজন। তার দেশের বাড়ি ভোলা তজুমদ্দীন। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে পড়ালেখার পাশাপাশি ইমামতিও করে। খুবই নম্রমেজাজের সে। সারাবছর আমার মুসলিম আউয়ালের ইবারত পড়েছে। কন্ঠ খুবই সুন্দর ছিল। দ্রুত ইবারত পড়তে পারত। আমি খুব আদর করতাম।
মুফতি নাজমুল ইসলাম কাসেমী আরও বলেন, আমাদের আল হাইয়ার কেন্দ্র শায়েখ হাসান জামীল সাহেবের মাদরাসা; দারুল উলুম রূপগঞ্জে। প্রতিদিনের মতো আজও পরীক্ষা শেষ করে, সাথিদের সাথে খাবারদাবার খেয়ে একটা কিতাব নেয়ার জন্য মাদরাসায় আসছিল। রাস্তায় জ্যাম ছিল; তাই মোটরসাইকেল ব্রেক করে সে আর তার আরেক সাথি ভাই দাঁড়ায়া ছিল রাস্তার পাশেই।
তিনি জানান, অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই ধুম করে সামনে থাকা ডাম ট্রাক তার সাইকেলে ধাক্কা দেয়; সাথে সাথেই সাইকেল আর সে রাস্তার পাশের একটি গাছে যেয়ে লাগে। হ্যালমেট ভেঙ্গে যায়। সেও প্রচন্ড আঘাত পায় মাথায়। এবং সাথে সাথে ইন্তিকাল করে। পেছনে থাকা ছেলেটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে পাশে দাঁড়ায়া ছিল; তাই সে আঘাত পায়নি।
শিহাবের স্মৃতিচারণ করে শিক্ষক বলেন, শিহাবের জন্য দীর্ঘদীন আমার মন পোড়বে। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আমার। শিহাব শেষমেশ দুটো কথা বলছিল আমায়, পরীক্ষায় যাওয়ার আগে হেসে হেসে বলছিল, হুজুর আপনি তো সেলিব্রিটি মানুষ; বিদায়ী ক্রেস্ট আপনার হাত থেকে নেব৷ স্মৃতি হিসেবে আপনার সাথে একটা ছবি তুলে রাখব। না কইরেন না।
দ্বিতীয় আবদার ছিল- হুজুর আপনি খোঁজখবর নিয়ে ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে আমাকে আদবে ভর্তি করে দিয়েন। আমি ওয়াদা দিয়েছিলাম, ইনশাআল্লাহ সব হবে। ভালো করে পরীক্ষা দাও বাবা।
হাআমা/