আওয়ার ইসলাম: এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামান ও তার ব্যবসায়িক সহযোগী একই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার আমিনুর রশিদ খানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের খাতায় বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী ও আমিনুর রশিদের দুই ছেলের নামও রয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারে ওই ছয়জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান।
সম্প্রতি পরিচালক বদিউজ্জামান ও তার সহযোগী আমিনুর রশিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের একটি অভিযোগ কমিশনে জমা পড়ে। পরে অভিযোগটি যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এম বদিউজ্জামান ও আমিনুর রশিদ, তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খান এবং বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ গুরুতর। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের শেয়ার ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামান ও তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তখন তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনা, মানি লন্ডারিং ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী আমিনুর রশিদ খান ও তার দুই ছেলে।
দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, এম বদিউজ্জামানের সহযোগী আমিনুর রশিদের রাজধানীর ২০, দিলকুশা ইউসুফ চেম্বারের তৃতীয় তলায় বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস রয়েছে। দুর্নীতি, কর ফাঁকি ও কালো টাকার ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আমিনুর রশিদ এনআরবি ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডার। তার দুই ছেলে ব্যাংকটির পরিচালক। তারা মূলত বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার ও হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম অংশীদার বদিউজ্জামানের স্ত্রী তানিয়া জামান। আমিনুর রশিদের দুই ছেলেও আন্তর্জাতিক হুন্ডি ব্যবসায়ী। দুবাইতে তার দুই ছেলের নামে-বেনামে বাল্ক্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার ইনভয়েস করে অর্থ পাচার করেন তারা।
অভিযোগে আদম ব্যবসায়ী ইদ্রিস ফরায়জীর অনিয়ম-দুর্নীতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'পপুলার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস' প্রতিষ্ঠানের আড়ালে এটির মালিক ইদ্রিস ফরায়জী অবৈধভাবে ও অবাধে আদম ব্যবসা চালাচ্ছেন। নামে-বেনামে ও সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সাইনবোর্ডে নামে-বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের যোগসাজশে হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
-এএ