শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়ত সভাপতি আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী আর নেই ‘খালেদা জিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার সম্মান দেয়া সততার পুরস্কার’ ফ্যাসিস্ট সরকারের সব অন্যায়ের বিচার হবে : ডা. জাহিদ কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ

ইসলামের শত্রুর প্রতি কঠোরতাও মুমিনের অন্যতম গুণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি কামরুজ্জামান।।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে রাসুল সা. এর প্রতি অবতীর্ণ পবিত্র কোরআনে কারীমে মুমিনদের বন্ধু ও শক্রদের পরিচয় সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। মুমিনদের বন্ধু কারা, কাদের সাথে মুমিনদের অন্তরঙ্গ থাকা উচিত আর কারা মুমিনদের বড় দুশমন, কারা মুমিনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا

(হে নবী) আপনি ঈমানদারদের প্রতি শক্রতার ব্যপারে সবচেয়ে কঠোর পাবেন ইহুদি ও মুশরিকদেরকে। (সুরা মাইদা, ৮২ আয়াত )
অপরদিকে সুরা মাইদার ৫১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করোনা। কারণ তারা পরস্পরে বন্ধু। সুতরাং তোমাদের মধ্যে থেকে যে তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।

এ আয়াতের শানে নুযুলে দেখা যায়-রাসুল সা. যখন মদিনাতে হিজরত করলেন, আগে থেকে ইহুদিরা মদিনাতে বসবাস করতো, তখন ইহুদিদের সাথে এই মর্মে চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন যে আমরা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবোনা। আমাদের কেউ যদি বহিঃশক্র দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে সবাই মিলে প্রতিহতের ব্যবস্থা করবো। কিছু দিন পর্যন্ত এই চুক্তি বলবৎ থাকার পর ইহুদিরা এই চুক্তি ভঙ্গ করল। তারা একদিকে মুসলমানদের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে মক্কার পৌত্তলিক মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করল।

অপর দিকে তাদের মধ্য থেকে কিছু মুনাফিক তৈরী করল যারা মুসলমানদের সাথেও সম্পর্ক রাখত। ইহুদিদের এই গোত্রের নাম ছিলো বনু কুরাইজা। এদেরকে পরবর্তিতে শস্তিও দেওয়া হয়েছে। মুনাফিকদের এ দলটি তৈরী করার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিলো মুমিনদের ভিতরগত খবর জেনে নেয়া। মহান আল্লাহ তা’য়ালা মুমিনদের বললেন, তোমরা ইহুদি খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করোনা। কারণ, তারা পরস্পরে বন্ধু। ইহুদি সম্প্রদায়কে যখন রাসুল সা. এর পক্ষ থেকে মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হল, তখন তা তারা প্রত্যাখ্যান করল। অবশেষে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে এ বন্ধুত্বের অবসান ঘটে।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ
মুমিনদের প্রতি তারা খুব রহমদিল ও কাফেরদের প্রতি বড় কঠোর।

একজন প্রকৃত মুমিন কাফেরদের প্রতি কতটা কঠোর উল্লেখিত আয়াতে কালিমায় এর উজ্জল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

তা ছাড়া উম্মতে মুহাম্মাদির সর্বশ্রেষ্ট ব্যক্তি ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী হযরত আবু বকর রা. এর জীবনীতেও এর নমুনা পাওয়া যায়। হাফিজ ইবনে কাসীর রহ. তার প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফসিরুল কুরআনুল আজীমে সূরা আল ইমরানের ১৮১ নং আয়াতের
لقدسمع اللَّه قول الذىن قالو ان الله فقير ونحن اغنياء তাফসির বর্ননা করেন হযরত আবু বকর রঃ একবার ইহুদিদের তাওরাত পাঠের ঘরে প্রবেশ করলেন, সেখানে তিনি ইহুদিদেরকে ফিনহাস নামক এক ব্যক্তির কাছে সমবেত পেলেন। সে একজন ইহুদি আলেম ও পন্ডিত ছিলো। তার সাথে ইহুদিদের একজন বড় পাদ্রী ছিলো-যাকে আশি বলা হত।
!فقال أبو بكر: ويحك يا فِنْحَاص
اتق الله وأسلم، فوالله إنك لتعلم أن محمدًا رسول الله، قد جاءكم بالحق من عنده، تجدونه مكتوبًا عندكم في التوراة والإنجيل،

হযরত আবু বকর রা. বললেন, হে ফিনহাস তোমার ধংস হোক। তুমি আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তুমি জানো তোমাদের কাছে বিদ্যমান তাওরাত ইঞ্জিলে লিখিত পাও যে, মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসুল। তিনি অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য সহকারে তোমাদের কাছে এসেছেন। তখন ফিনহাস ঔদ্বত্য প্রকাশ করে বলল, আল্লাহর কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। তিনিই তো আমাদের প্রতি অধিক মুখাপেক্ষি। আমাদের কাছে অনুনয় বিনয় করে চায় আমরা তো ধণী। আর দেখনা সে তো ঋণ চায়। কোরআনের আয়াত টেনে বলে,
مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا

যদি তিনি ধনী হতেন তাহলে এভাবে সুদ চাইতেন না। তৎক্ষণাৎ হযরত আবু বকর রা. অত্যন্ত ক্রদ্ধ হলেন এবং তার চেহারায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করলেন। তারপর বললেন সেই সত্তার শপথ যার কর্তৃত্বে আমার জীবন। আমাদের মাঝে ও তোমাদের মাঝে যদি সন্ধি চুক্তি না থাকতো তাহলে তোমার গরদানকে উড়িয়ে দিতাম।

এই হল সেই ব্যক্তির অবস্থা যার ব্যপারে রাসুল সা. এরশাদ করেছেন ارحم أمتى بأمتى أبو بكر
আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু হচ্ছে হযরত আবু বকর রা.। পরবর্তিতে ফিনহাজ রাসুল সা. এর কাছে এসে আবু বকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, দেখুন আপনার সঙ্গী আমার সাথে কি আচরণ করেছে। রাসুল সা. তখন হযরত আবু বকর রা. কে বললেন,
ما حملك على ما صنعت

একাজ করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ব করলো? হযরত আবু বকর রা. তাঁর স্বভাব সুলভ সিফাতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ফিনহাজ কর্তৃক আল্লাহ তা’য়ালার শানে বিয়াদবী ও এর প্রতি উত্তরে তার পক্ষ থেকে উত্তম জবাবের কথা স্বীকার করলেন।

এখানে আমাদের লক্ষণীয় বিষয় হল-হযরত আবু বকর রা. এর মত কোমল হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিও আল্লাহর শানে বিয়াদবের প্রতি গর্জে উঠলেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বললেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

হে মুমিনগণ! তোমরা আহলে কিতাব ও কাফেরদের মধ্যে থেকে ঐ সমস্ত লোকদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা, যারা তোমাদের ধর্মকে ঠাট্টা ও খেল-তামাশার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করে।

লেখক:-প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস, জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম-ফরিদপুর (খাবাসপুর মাদরাসা), খতিব-চকবাজার জামে মসজিদ, ফরিদপুর।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ