ফরহাদ খান নাঈম ।।
মুসলমানদের জন্য কোনো অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা অথবা তাকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই। ইসলাম মুসলমানদেরকে কাফির-মুশরিকদের সঙ্গ পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছে। কারণ তারা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর উপাসনা করে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহ যে স¤প্রদায়ের প্রতি রুষ্ট তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না, তারা তো আখিরাত সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে। যেমন হতাশ হয়েছে কাফিররা কবরবাসীদের বিষয়ে। সূরা মুমতাহিনা: আয়াত ১৩
সর্বদা সৎ সঙ্গ নির্বাচনের উপর রাসুলুল্লাহও সা. যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশিষ্ট সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, মুমিন ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গ পরিত্যাগ করো। এবং মুত্তাকী ব্যতীত অন্য কাউকে তোমার খাবারে শরীক করো না। তিরমিযী: ২৩৯৫।
উপরোক্ত হাদীসে নবীজী সা. মুমিন ব্যতীত অন্য কারো সাথে অন্তরঙ্গ হতে নিষেধ করেছেন; এমনকি এমন কারো সাথে খেতেও বারণ করেছেন। কারণ একসাথে খাওয়া ও অবাধ মেলামেশা কারো প্রতি হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হবার একটি অন্যতম উপকরণ। সুতরাং কাফির-মুশরিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া তো দূরের কথা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ করা থেকেও বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
এ ব্যাপারে নবীজী সা. আরো বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের সাথে অন্তরঙ্গপূর্ণ সহাবস্থান করো না; এবং তাদের সাথে মেলামেশাও করো না। যে ব্যক্তি তাদের সাথে মেলামেশা করবে কিংবা সহাবস্থান করবে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বায়হাকী: ৯/১৪২।
কাফির-মুশরিকদের সাথে অন্তরঙ্গতা রাখা যাবে না, তার মানে এই নয় যে, তাদের সাথে অশোভন আচরণ করতে হবে। বরং তাদের সাথে সবসময় সৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রাখতে হবে। হতে পারে, মুসলমানদের সুন্দর আচার-ব্যবহার দেখে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে।
এ ব্যাপারে আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, একজন ইহুদী বালক নবীজীর সা. খেদমত করতো। একবার সেই বালকটি অসুস্থ হয়ে পড়লো। নবীজী সা. তাকে দেখতে এলেন। তিনি সা. তার মাথার কাছে বসলেন, এবং বললেন, তুমি মুসলমান হয়ে যাও।
রাসুলুল্লাহর সা. কাছ থেকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেয়ে বালকটি তার পাশে বসা তার পিতার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। বালকটির পিতা বললো, আবুল কাশেম (নবীজী) সা. যা বলছেন তা মেনে নাও। অত:পর বালকটি মুসলমান হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর নবীজী সা. সেই ঘর থেকে বের হয়ে এলেন, এবং বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচালেন। বুখারী: ১২৯০।
সুতরাং ইসলাম একদিকে যেমন কাফির-মুশরিকদের সাথে অন্তরঙ্গতা না রাখার নির্দেশ দিয়েছে, অপর দিকে তাদের সাথে সৌজন্যমূলক ও শোভনীয় আচরণ করার মাধ্যমে সমাজে সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছে।
islamQ থেকে ফরহাদ খান নাঈমের ভাষান্তর।
-এটি