ফরহাদ খান নাঈম।।
স্ত্রী সহবাস স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ন্যায্য অধিকার। স্ত্রী কিংবা স্বামী কারোরই বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া একে অপরকে এই অধিকার থেকে বি ত করার অধিকার নেই। অন্যথায় উভয়কেই গুনাহগার হতে হবে। স্বামী যখনই তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করবে, স্ত্রীর জন্য সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন। বুখারী: ৪৭৯৪
উপরোক্ত হাদিসে “যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে” বলতে সহবাসের আহŸানের কথা বোঝানো হয়েছে। এখানে “বিছানা” শব্দটি সহবাসের রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে লজ্জাজনক অনেক শব্দের ক্ষেত্রে রূপক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আর “ফেরেশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন” বলতে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বৈধ আহ্বানে প্রতি অস্বীকৃতির ভয়াবহতা বোঝানো হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় “ফেরেশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন” এর বদলে “ফেরেশতাগণ তাকে ফিরে আসার (স্বামীর আহ্বান সাড়া দেওয়ার) আগ পর্যন্ত অভিসম্পাত করতে থাকেন” উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্ত্রীর এই অস্বীকৃতির পেছনে যদি শরয়ী কোনো ওজর থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
এখন প্রশ্ন হলো, “বিছানার” প্রতি এ আহ্বান কি শুধু রাতের জন্য প্রযোজ্য নাকি দিনের বেলাও এ আহ্বান জন্য উপযুক্ত? এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সেই সত্ত¡ার কসম, যার হাতে আমার জান, যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী আসতে অস্বীকার করে। তাহলে এ অবস্থা থেকে শুরু করে যখন পর্যন্ত স্বামী তার ওপর খুশি না হয় ততোক্ষণ পর্যন্ত আসমানে যিনি আছেন (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা) তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। মুসলিম।
ইবনে খুজাইমা ও ইবনে হিব্বান জাবির রা. থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদের দুআ কবুল হয় না; এবং যাদের কোনো ভালো কাজ আসমান পর্যন্ত পৌঁছায় না। তারা হলো: পলাতক ক্রীতদাস যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার মনিবের কাছে ফিরে আসে। মাতাল ব্যক্তি যতক্ষণ না পর্যন্ত সে সুস্থ প্রকৃতিস্থ হয়। ঐ স্ত্রী যার উপর তার স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট হয়।
উপরোক্ত হাদিসদ্বয় থেকে একথা স্পষ্ট করে বোঝা যায় যে, স্ত্রীকে স্বামী কর্তৃক “বিছানায়” আহ্বান শুধুমাত্র রাতের বেলায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং স্বামী চাইলে তার স্ত্রীকে দিনের বেলায়ও আহ্বান করতে পারেন।
সৃষ্টিগতভাবেই একজন পুরুষ একজন নারীর তুলনায় যৌন উত্তেজনার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম সহনশীল। বিজ্ঞান বলছে, একজন বিবাহিত পুরুষের জন্য সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো চাহিদামতো ও সময়মতো স্ত্রীর কাছ থেকে যৌন পরিতৃপ্তি না পাওয়া। তাই সুস্থ বৈবাহিক জীবন নিশ্চিতকল্পে একজন স্ত্রীর উচিত স্বামী আহ্বান করা মাত্রই তার আহ্বান সাড়া দেওয়া ও তাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে চেষ্টা করা।
সুতরাং একজন স্ত্রীর উচিত সবসময় তার স্বামীর মনোরঞ্জনের দিকে খেয়াল রাখা। অন্যথায় স্বামীর অসন্তুষ্টির কারণে সংশ্লিষ্ট স্ত্রী আল্লাহ তায়ালারও অসন্তুষ্টি প্রাপ্ত হবে।
IslamQA থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।
-এটি