ইশতিয়াক সিদ্দিকী, ।।
হাটহাজারী প্রতিনিধি>
ওলামায়ে হক্কানির দিকনির্দেশনা ছাড়া সহিহ তাবলীগ চলতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
গতকাল ২৩ অক্টোবর শুক্রবার বাদ মাগরিব চট্টগ্রাম লাইভলেইন মার্কাজে হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার উপস্থিতিতে আসমানী ইলমের গুরুত্ব সম্পর্কে বয়ানকালে আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেছেন, হে নবী সা. আপনি বলুন যে,যারা আসলামী ইলম জানে আর যারা আসমানী ইলম জানে না তারা কি সমান হতে পারে? অর্থাৎ কখনো সমান হতে পারে না।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, তরীকতের সম্রাট,শরীয়তের বাদশাহ আরেফ বিল্লাহ মোল্লা রুমী রহ. বলেছেন,সমগ্র পৃথিবী আকৃতি মাত্র। এর রূহ বা জান হলো আসমানী ইলম। এবং পুরো জগতের বাদশা হযরত সোলায়মান আ. এর বিশাল ক্ষমতার মূল রহস্য বা কারণও ছিলো আসমানী ইলম।
সবকিছু হযরত সোলাইমান আ. এর হুকুম মেনে চলতো। অর্ডার পালন করতো। এমনকি গর্তের পিঁপড়া, সমুদ্রের মৎস এবং আকাশের বাতাসও সোলায়মান আ. এর অধীনস্থ ছিলো। এই বিশাল ক্ষমতার কারণ কোন ধন সম্পদ বা অস্ত্র- সস্ত্র ছিলোনা। এর মূল কারণ ছিলো আসমানী ইলমের শক্তি।
এই ইলমে রব্বানী এবং উলুমে নবুওয়াত যাঁদের বুকের মধ্যে আছে তারাই হক্কানি আলেম।
কুরআনে পাকে আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেছেন,হক্কানি আলেমরাই শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে। যারা আল্লাহ তায়া’লাকে ভয় করেনা তারা বাস্তবে আলেম-ই নয়। এই হক্কানি আলেমদের বড় দায়িত্ব হলো দাওয়াত ও তাবলীগের লাইনেও মেহনত করা। আল্লাহর রাসুল সা. যেখানেই যেতেন দাওয়াতের কাজ করতেন। রাসুল সা. এর আপন চাচা খাজা আবু তালেব যখন মৃত্যু সহ্যায় তখন তিনি চাচাকে দেখতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন সেখানে আবু জাহেল সহ অনেক বড় বড় কাফেরদের সর্দাররা উপস্থিত। তার পরও সেখানে রাসুল সা. দাওয়াতের কাজ করেছেন,দাওয়াতের মিশন চালু রেখেছেন।
রাসুল সা. নিজের চাচা আবু তালেবকে ইসলাম কবুল করার জন্য প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছেন। আবু জাহেল এই দাওয়াতের বিরুধীতা করলেও রাসুল সা. বিন্দুমাত্রও সংকোচ করলেন না।
মোদ্দাকথা হলো,হক্কানি আলেমরা দাওয়াতে তাবলীগের ময়দানে আসতে হবে। আল্লাহর বান্দাদেরকে হকের রাস্তা দেখাতে হবে। রাসুল সা. এর উম্মতদেরকে রাসুলের পথ দেখাতে হবে। একজন দাঈ ইলম,আমাল, সৎ চরিত্র, নম্রতা,ইখলাছ,উম্মতের দরদ এসব গুণে গুণান্বিত হতে হবে।
তাবলীগের সাথী ভাইদের উদ্দেশ্যে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আপনারা এদিক সেদিক না গিয়ে হক্কানি ওলামায়ে কেরামের সাথে থাকুন। তখন আপনারা সীরাতে মুস্তাক্বিমের উপর থাকতে পারবেন। যারা হক্কানি ওলামায়ে কেরামের সাথে নেই তারা হেদায়েতের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। তাবলীগী জামাত এবং হক্কানি ওলামায়ে কেরামের সম্পর্ক অনেক আগ থেকেই অঙ্গাঅঙ্গীভাবে চলে আসছে। তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) একজন আলেমে রব্বানী ছিলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে তাবলীগের বিশ্ব আমীর ছিলেন, হযরত আল্লামা ইউসুফ কান্ধলভী রহ.। যিনি হাদীসের কিতাব ত্বহাবী শরীফের শরাহ ব্যখ্যা লিখেছেন।
অতঃপর বিশ্ব আমির ছিলেন, হযরত মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব রহ.। ভারতের এক সফরে নিজামুদ্দিনে ওনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো। ওনার আলোকোজ্জ্বল নুরানী চেহারা দেখে আমার মনে হয়েছিলো,শুধু ওনার চেহারা দেখেই অনেক অমুসলিম মুসলমান হয়ে যাবে।
এ ছাড়া হযরত আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ.,হযরত আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.,হযরত আল্লামা মানজুর নোমানী রহ. এবং বাংলাদেশের হযরত মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. সহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম তাবলীগের ময়দানের বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন। তাঁরা তাবলীগের উপর অনেক মূল্যায়ন কিতাবাদী রচনা করেছেন।
বর্তমানে হযরত মাওলানা আহমদ লাট সাহেব,হযরত মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সাহেবের মতো বড় আলেমগণ তাবলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যতদিন ওলামায়ে হক্কানি এবং দাওয়াতে তাবলীগের মাঝখানে এই সুসম্পর্ক থাকবে ততদিন দাওয়াত ও তাবলীগ সঠিকভাবে পরিচালিত হবে।যারা ওলামাদের জামাতের বাহিরে আছেন আমি তাদের আহবান করবো আপনারা ওলামাদের জামাতে এসে এখলাছের সাথে দাওয়াতের কাজ করুন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, মানুষের ভুলত্রুটি হতে পারে কিন্তু ভুল থেকে তাওবা করা এটাই খালেছ মু'মিনের আলামত।
তাবলীগের এই জোড়ে অন্যান্যদের মধ্যে আরো মূল্যবান নসিহত পেশ করছেন করেছেন, হযরত মাওলানা শেখ আহমদ,হযরত মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী,মুফতী শামসুদ্দিন জিয়া,মুফতী কিফায়াতুল্লাহ,মুফতী জসিমউদদীন,মাওলানা আবু তাহের নদভী,মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী,মাওলানা খোবাইব জিরি,মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী,কাকরাইলের উস্তাদ মাওলানা নুরুর রহমান প্রমূখ।
-এটি