বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


৩ বছরেও শুরু হয়নি ফরিদপুরের হাফেজ শিমুল হত্যার বিচার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হোসাইন: ফরিদপুরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র হাফেজ সোলায়মান মিয়া শিমুল (২৫) হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি তিন বছরেও।

২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর মাগরিবের নামাজের একটু আগে শোভারামপুর এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ইসাহাক মিয়া কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিন দফা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মুহা. জাহাঙ্গীর আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে রঘুনন্দনপুরের মাসুদ শেখ (৩৮), হাবিবুর রহমান হবি শেখ (৪১) মনিরুল ইসলাম মিলন শেখ (৪৪), শিমুল শেখ (২২), রিপন মোল্যা (৩৫), টিপু পাট্টাদার (৩২), অমরেশ ওরফে অমলেশ মালো (২৫), জামাল পাট্টাদার (৫৫), সুশান্বত (২০), রবিউল ইসলাম রবি (১৯) এবং রাজু মোল্যা ওরফে রাজাকে (২২) হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার বাদি ইসাহাক শেখ বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে একাধিক সাক্ষির জবানবন্দিতে ও এজাহারে উল্লেখিত তিন আসামি কবির শেখ (৪৭) তার ভাই খবির শেখ (৫০) ও নুরুল ইসলাম শেখ ওরফে এহসানের (৩৫) নাম এলেও অভিযোগপত্র থেকে রহস্যজনক কারণে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ কারণে তিনি নারাজি দেন।

জেলার সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ১৬ এপ্রিল নারাজি আবেদনের শুনানীর পর ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ফরিদপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

ইসাহাক শেখ জানান, মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। মোটা অংকের টাকা পয়সা খরচ করেছে আসামিরা। সম্প্রতি পতন হওয়া ফরিদপুরের এক বিতর্কিত রাজনীতিবীদ ও একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা আসামিদের হয়ে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন।

তিনি বলেন, আমি টাকা চাই না, ছেলে হত্যার বিচার চাই।

মেধাবী ছাত্র হাফেজ সোলায়মান শিমুলকে বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা ন্যায় বিচার দাবি করেন।

জানা গেছে, হাফেজ শিমুল হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অন্যতম আসামি রিপনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর আরেক আসামি মিলন র‌্যাবের হাতে আটক হয়। এরপর টিপু ও জামাল পাট্টাদার আদালতে আত্মসমর্পণ করে। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় কোনো আসামির স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি আদালতে। এরপর অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেয়ার পর আরো তিন আসামি জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে মামলার সব আসামি জামিনে রয়েছে।

ফরিদপুরের পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার বসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি নারাজি দেয়া হত্যা মামলার ফাইল তার কাছে এসেছে। তবে তিনি সেটি এখনো কাজ শুরু করতে পারেননি।

উল্লেখ্য, ছাত্রজীবনে ফরিদপুরের সামসুল উলুম মাদরাসা থেকে হাফেজি পরীক্ষায় প্রথম হন এরপর রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন হাফেজ শিমুল। হত্যাকারীরা তাকে বাড়ি কাছে ঈদগা মাঠে নিয়ে লোহার হাতুড়ি, রড, বাইশলা, কাঠের বাটামসহ নানারকম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রথমে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে।

এরপর তাকে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মমভাবে উপর্যুপরী আঘাতের পর আঘাত করা হয়। আর মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

-এএ


সম্পর্কিত খবর