আবুল কাশেম অফিক: ডাক্তার সরকারি। প্রতিদিন রোগী দেখেন প্রাইভেট অর্থাৎ হাসপাতালের কোয়ার্টারে ৩ শত টাকা ভিজিটে। অফিসে যান শুধুই হাজিরা দিতে। হাজিরা দিয়েই চলে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়ার্টার চেম্বারে। কোয়ার্টারের চেম্বারে রোগী না আসা পর্যন্ত সময় কাটান টিএইচও সাহেবের অফিস রুমে বসে। নিজের মতো করেই স্বাধীনভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটডোর সহ আবাসিক বিভাগের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেটে চেম্বার করে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন হাসপাতালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে মাসিক সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেই যাচ্ছে। কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন হাজিরা দিয়েই নিয়মিত রোগী দেখেন চেম্বারে।
বলছিলাম বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মামুন আহমদের কথা।
ডাক্তার মামুন আহমদ দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর থেকে ঔ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। এখানে নিয়োগ লাভের পর থেকে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে তিনি দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন পালন করে যাচ্ছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যেখানে প্রতিদিন ডিউটি করার কথা- সেখানে তিনি তা না করে নিয়মিত রোগী দেখছেন হাসপাতালের কোয়ার্টারে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়ার্টার থাকার কথা থাকলেও তিনি সেখানে না থেকে থাকেন সিলেটে। অফিস টাইমের তোয়াক্কা না করেই সিলেট থেকে ইচ্ছামত আসা-যাওয়া করেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে। অফিসে এসেই শুধুমাত্র হাজিরা খাতা সহ অন্যান্য খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে রোগী দেখার জন্য চেম্বারে চলে যান। দিনের বাকি সময়টুকু সেখানেই কাটে ওই চিকিৎসকের।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিজের মতো করে আবাসিক বিভাগের দ্বায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছেন। যদিও তিনি দাবি করেছে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এই প্রতিবেদক কয়েকজন সংবাদকর্মীদের সাথে নিয়ে একাধিকবার সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলা মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব রেখে ডা. মামুন আহমদ সকাল ১১টা বা সাড়ে ১১টার পর থেকেই ওই কোয়ার্টারে প্রাইভেট রোগী দেখছেন।
সর্বশেষ গত ৩ জুন আনুমানিক সকাল সাড়ে ১২ টায় ও গত ১লা জুলাই ও কি সময়ে প্রথমে ওই চেম্বারে কয়েক জন রোগীকে পাঠানো হয়।
এব্যাপারে এ প্রতিবেদক নিজেই তার কাছে বক্তব্যের জন্য জানতে চাইলে ডাক্তার মামুন আহম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, করোনার এই সময়ে প্রায় ৪ মাসে আমি রোগী দেখেছি মাত্রা ৮ দিন তাও আবার অফিস টাইমের পরে। প্রতিবেদক নিজে চেম্বারে হাজির হয়ে ভিডিওর করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে বলেন এগুলো এডিট করা যায়।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হাসাপাতালের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকশ না করার শর্তে বলেন, তিনি সপ্তাহে এক দিন রাতে ডিউটি করার কথা কিন্তু টিএইচও সারকে ম্যানেজ করে রুটিন থেকে তার নাম কৌশলে বাদ দীর্ঘদিন থেকে রাতে ডিউটি করেছেন না।
হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখার কথা থাকলেও তিনি কোন দিন সেখানে বসেছেন বলে মনে হয়না। এছাড়াও ঠুকনো ব্যাপারে রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলের কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করারও অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বালাগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি মো: জুনেদ মিয়া বলেন, সরকারি অফিস সময় প্রাইভেট রোগী দেখেন বিষয়টি আমি জানিনা, আগামী মিটিং এ এব্যাপারে আলোচনা করবো।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুহিন মনসুর বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে দেখেছি, হাসপাতাল নিয়ে কোন দুর্নীতি হলে এটাকে প্রশ্রয় দেয়া হবেনা।
অভিযোগের বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার এস এম শাহরিয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিস টাইমে প্রাইভেট রোগী দেখার কোন নিয়ম নেই। অফিস টাইম পরে হয়তবা দেখতে পারেন। আপনার কাছে উপযুক্ত প্রামাণ থাকলে দেন আমি ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে সিলেট সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রেমানন্দ মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেট চেম্বার করার নিয়ম নেই। সব বিষয়ে আমাকে বলার প্রয়োজন নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিষয়টি অবগত করুন।
-এটি