আবুল কাশেম অফিক: করোনার পরিস্থিতিতে আর্থিক অস্বচ্ছলতা দুরীকরনে সারা দেশের ন্যায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মসজিদ সমূহের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের টাকা নিয়ে বিভিন্ন মসজিদ কমিটি টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকা আবার অনেক মসজিদ কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি মসজিদের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেদের পকেটে রেখেছেন বলেও জানা গেছে।
এতে করে প্রধানন্ত্রীর দেয়া উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনগন। চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে ভুক্তভোগী অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ চাপা কষ্ট বুকে চেপে ধরে রেখেছেন। কারো কাছে বলতে পারছেন না। অনেক মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এই টাকা নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে নাজেহালেরও খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মে ইসলামি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সকল মসজিদে ১২২ কোটি দুই লক্ষ ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
এর পর দেশব্যাপী দাবি উঠে ওই টাকাগুলো দেশের সকল মসজিদ সমুহের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দেয়ার জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ইফার ডিজি গণমাধ্যমে টাকাগুলো ইমাম মুয়াজ্জিনদেরকে দেয়ার জন্য বলে দেন।
এর আলোকে গত ৩০ মে শনিবার দুপুরে দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন প্রাঙ্গনে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলার ৩০০ টি মসজিদের মধ্যে দেওয়ান বাজার ও পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নে ৮৫টি মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দের হাতে অনুদানের চেক প্রদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাকুর রহমান মফুর, বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ , বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকগন।
পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে একই ভাবে বাকী ইউনিয়নের ১৪৯ টি মসজিদ সমূহের অনুকুলে থাকা বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মধ্যে মোট ২৩৪ টি মসজিদে ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার চেগ হস্তান্তর করা হয়। বাকী মসজিদ সমুহে এই অনুদান বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু খবর নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হলেও সেই টাকা মসজিদ কমিটি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দেওয়া হয়নি।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বালাগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, রুপিয়া জামে মসজিদ, রুপিয়া উত্তর জামে মসজিদ,গহরমলি (রহমতপুর) জামে মসজিদ, শিরিয়া জামে মসজিদ, ঘোরাপুর জামে মসজিদ, কুশারগ্রাম জামে মসজিদ, জামে মসজিদ, চরহাড়িয়া জামে মসজিদ, হোসেন পুর শেখ পাড়া জামে মসজিদ।
পুর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের মৈশাষী হাওড় পাড় জামে মসজিদ, পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের আজিজ পুর বাজার জামে মসজিদ, নলজুড় জামে মসজিদ, শাহ জালাল জামে মসজিদ নলজুড়। পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের শাহজালাল জামে মসজিদ বঙ্গপুর-রশিদ পুর, হামছাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের আহমদ পুর জামে মসজিদ, সহ বেশ কয়েকটি মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনরা সেই অনুদানের টাকা পায়নি।
এসব এলাকা সহ উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদেরকে যে উপহার টাকা প্রদান করেছে সে টাকা তারা পাননি।
এছাড়াও দেখা গেছে বালাগঞ্জের কিছু কিছু মসজিদ কমিটির লোকজন সেই অনুদান ইমাম, মুয়াজ্জিনদের বুঝিয়ে না দিয়ে তারা তা মসজিদ ফান্ডে জমা রাখছেন। কিংবা কেউ কেউ নিজেদের কাছেই তা রেখে দিয়েছেন। আর এই প্রসঙ্গে ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিন তা জানতে চাইলে ভিভিন্ন টালবাহানা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিনরা জানান, এই বিষয়ে মসজিদ কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হলে কমিটির লোকজন তাদেরকে বলেন, অনুদান ইমামদের জন্য নয়, সেগুলো মসজিদের ফান্ডের জন্য দেয়া হয়েছে। অথচ খবর নিয়ে জানা গেছে এই অনুদান শুধুমাত্র মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবদের জন্য দেয়া হয়েছে। অনুদান বিতরণের সময় সত্যতা যাচাই করতে এবং মসজিদের সিল সাক্ষর দেয়ার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজনকে রাখা হয়েছে। মুলত এই অনুদান শুধুমাত্র মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবদের জন্য দেয়া হয়েছে।
যেখানে সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খতিবদের অসহায়ের কথা চিন্তা করে এই উপহার দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন সেখানে তার ওই টাকাগুলো থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এই টাকা আমাদের হক, টাকা না দিয়ে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা মাফ দেব না।
ইসলামি ফাউন্ডেশনের বালাগঞ্জ উপজেলা ফিল্ড সুপার ভাইজার মুহা. সাব্বির আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, টাকাগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। আমরা শুধু উনাদের সহযোগিতা করেছি।
এবিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশ কুমার সিংহ বলেন, ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রজ্ঞাপনের আলোকে আমরা মসজিদ কর্তৃপক্ষের নিকট চেক হস্তান্তর করেছি। পরবর্তীতে আমাদের কেউ চিঠি কিংবা ফোনে ইমামদের দিতে হবে সেটা অবহিত করেনি।
ইফার সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ফরদ উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রথমে মসজিদের টাকা হিসাবে গেজেট আসলেও পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, ইফার ডিজির ভিডিও বার্তা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে ওই টাকাগুলো ইমাম মুয়াজ্জিনদের। এর পর থেকে অনেকেই টাকা দিয়েছেন আবার অনেক যায়গায় থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে টাকা দিচ্ছেন না। টাকা যাথে ইমাম মুয়াজ্জিন পান সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দেশের এই সংকটময় মুর্হুতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদান যেনো সঠিক ভাবে প্রকৃত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবরা বুঝে পায়, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন তালিকা অনুযায়ী সবাইকে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
-এএ