আব্দুর রহমান আশরাফি ।।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি>
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে ধুঁকে ধুঁকে মরছে রোগী: গন্ধ ছড়ানোর পর বের করা হচ্ছে লাশ। এভানে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে এ হাসপাতাল।
এদিকে এ জেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ১৯ জন। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরো ১৯ জন। এখন পর্যন্ত বহিরাগত বাদে মোট আক্রান্ত সাড়ে ৮ শ।
কুষ্টিয়ায় বিনা চিকিৎসায় করোনা আক্রান্ত রোগীরা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ধুকে ধুকে মরছে। মৃত্যু’র পর দীর্ঘ সময় অতিক্রম হলেও লাশ বের হচ্ছে না। গন্ধ ছাড়ানো পর্যন্ত লাশ পড়ে থাকছে ওয়ার্ডে এমনই অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বলছেন, লাশের দায়িত্ব আমাদের না। রোগীর পরিবার লাশ নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে রোগীর সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য কোন ডাক্তার, নার্স এমন কি ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত নেই বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী রোগীরা। গত বুধবার দুপুরে একজন ওয়ার্ড বয় করোনা আইসোলেশনে গিয়ে দেখেন একজন রোগী মরে পড়ে আছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে উদ্ধার করেন।
এ হাসপাতলে ভর্তি হওয়া অসংখ্য রোগীরা অভিযোগ করে জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আওতায় হাসপাতাল সংলগ্ন যে ভবনে আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে সেখানে আসলে কোন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। ভর্তির পর জেলখানায় আটকের মতো আটকিয়ে যাচ্ছেন। তারপর ধুকে ধুকে মৃত্যু হলে মৃত্যুর পর গন্ধ ছড়ালে লাশ সেখান থেকে বের করা হচেছ।
আসলে আইসোলেশনে যারা মারা গেছেন তার আত্মীয়রাও সঠিক ভাবে বলতে পারেন না কখন সে মারা গেছেন। করোনা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা যখন জানতে পারছেন কেউ মারা গেছেন তখন তারা পরিবারকে খবর দিচ্ছেন।
এ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন। অপর দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৯ জন। আইসোলেশনে থাকা বিআরবির কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জুয়েলের মৃত্যুর অনেক পর পরিবারের মানুষ জানতে পারেন জুয়েল মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে যান সাংবাদিক জামিল হাসান খান খোকন।
কোন রকম করোনা পরীক্ষা ছাড়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা অবজারভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি না করে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেন। তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখেন সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স নেই। এরপর দুুপুর ১২ টার পর্যন্ত সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জনের সাথে কথা বললে জামিল হাসান খান খোকনের করোনা পরীক্ষা করতে দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সাংবাদিক খোকনের বনর্ণায় উঠে আসে আইসোলেশনের করুণ দৃশ্য।তিনি জানান, তাকে ভর্তি করানোর পর কয়েকজন সেচ্ছাসেবকের দেখা পেয়েছেন আইসোলেশন ওয়ার্ডের নিচে। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখেন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ভর্তি হওয়া রোগীরা। কোন ডাক্তার বা নার্স নেই। অন্য রোগীদের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারেন মঙ্গলবার বিকেলে একজন মারা গেছেন। আর লাশটা বুধবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত আইসোলেশনে পড়ে থাকে। নিহত ব্যক্তির নাম গোলাম মওলা।
তিনি শহরের কমলাপুরের বাসিন্দা। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। বর্তমানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৩৩ জন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বে রয়েছেন ৭৫ জন ডাক্তার। কিন্তু সেটি কাগজ কলমে। রোগীরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত ডাক্তার আসেন না। মাঝে মাঝে ডাক্তারদের দেখা মেলে। স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার দিয়ে যান। রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হলে অক্সিজেন দেয়ার জন্যও কারোকে পাওয়া যায় না। বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছে রোগীরা।
এ বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার বলেন, হাসপাতালের বাইরে একটি বিল্ডিং এ আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে বেডের সংখ্যা ৪০। কিন্তু রোগীর চাপ অনেক বেশী। তাছাড়া ভবনটি হাসপাতাল হওয়ার মতো নয়। ডাক্তার নার্স এবং ওয়ার্ড বয়দের সার্বক্ষণিক থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে চিকিৎসায় কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি হচ্ছে।
-এটি