আবুল কাশেম অফিক
বালাগঞ্জ থেকে>
করোনার পরিস্থিতিতে দেশের উপজেলার হাসপাতালে প্রায় রোগী শুন্য থাকলেও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর অবস্তা ব্যাতিক্রম।
কার্যত বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিকে প্রায়ই রোগী শুন্য থাকলেও গত (২০ মে - ১৬জুন) পর্যন্ত ৩৪ দিনের খাদ্য তালিকায় ৩১ শয্যার এই হাসপাতালে প্রায় ৫৪ জন রোগী ভর্তি দেখানো হয়েছে। মুলত গড়ে প্রায় এক দেড় জন রোগী ভর্তি ছিল, তাও আবার এক দেড় ঘন্টা পরে অনেকেই চলে গেছেন।
করোনার এই মহামারিতে অনেকটা ভয়ে হাসাপাতালে রোগী ভর্তি না হলেও খাবার তালিকায় পূর্বের ভর্তিকৃত রোগীদের হাসাপাতালে ভর্তি দেখিয়ে উঠানো হচ্ছে খাবার বিলের টাকা। আর এই বিলের উঠানো টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে ডাক্তার, স্টাফ ও খাবার সরবরাহের ঠিকাদারের মধ্যে।
বেশ কজন রোগী ভর্তির তথ্য এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। যারা ইতিমধ্যে এই হাসাপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে (ডিসচার্জ নিয়ে) বাড়ীতে চলে গেছেন। অথচ তারা বাড়িতে থেকেই হাসপাতালে খাবার খাচ্ছেন! যাচাই-বাছাই করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ মে-১৬ জুন পর্যন্ত ৫৪ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে দেখা গেলেও আবাসিক বিভাগের রোগীদের খাবার সরবরাহের ১৭০ জনের নামের তালিকা এই প্রতিবেদকের কাছে আসে। আর এই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বেশিরভাগ পূর্বের ভর্তিকৃত রোগীদের নাম।
গত ২০ মে এই প্রতিবেদক হাসপাতালে সরজমিন একটি সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়ে হাসপাতালের স্টাফ অমিতাবয় রায়ের বাবা অনীল রায় (করোনা প্রজেটিভ) ছাড়া আর কোন রোগী ভর্তি পাওয়া যায়নি। অথচ পরের দিন (২১ মে) খাবারের বিলে দেখা যায় ৫ জনের নাম।
সত্যতা নিশ্চিতের জন্য উল্লিখিত তালিকার মধ্যে থেকে মোবাইলে কয়েকজনের সাথে কথা হয়।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হাসাম পুর গ্রামের জাহিদ খানের ছেলে জাকির খান গত ৩০ মে ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি থেকে ২/৩ ঘন্টা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে আসেন। কিন্ত তার নামে ৩০মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত খাবারের বিল উঠানো হয়েছে।
একি গ্রামের সামাদ খানের স্ত্রী শাহারা খানম প্যাগনেন্সি সমস্যা নিয়ে গত ৫ মে ৩/৪ ঘন্টা ভর্তি থেকে হাসাপাতাল থেকে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু ১০ মে পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও খাবার খাচ্ছেন দেখানো হয়েছে।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের শিরিয়া গ্রামের আলী হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরাকে প্যাগনেন্সি সমস্যার কারণে গত ১৪ জুন ভর্তি করে মাত্র আধাঘন্টা পর সিলেট নিয়ে চলে যান। অথচ ১৬ জুন তার নামে খাবারের বিল তৈরী করা হয়েছে!
একি সমস্যার কারণে সদর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের হরেকৃষ্ণর স্ত্রী নিপা রানী দাসকে গত ৯জুন ভর্তি করে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে কয়েকঘন্টা পরে শ্রীমঙ্গনে নিয়ে যান। অথচ ১১ জুন পর্যন্ত তার নামে খাবারের বিল উঠানো হয়েছে।
এছাড়া এই প্রতিবেদক সরজমিন একাধিকবার বিভিন্ন কর্ম দিবসে গিয়ে হাসপাতালে কোন রোগী ভর্তি পাননি অথচ প্রতিদিন ৫/৬ জনের খাবারের বিল তৈরী করা হয়েছে।
উপজেলা হাসপাতালে কোম রকম তদারকি কিংবা জবাবদিহি না থাকায় এরকম মাসের পর মাস শত শত পূর্বের রোগীদের নাম দিয়ে তালিকা তৈরী করে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে আসলেও কখনও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অনিয়ম করে আসছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কেননা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রোগীদের ভুয়া তালিকা তৈরি করা সম্ভব নয়।
মুলত হাসপাতালের আবাসিক বিভাগের রোগীদের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার দেখভাল করে থাকেন।
তবে তালিকা তৈরির দায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মামুন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই তথ্যটি অস্বীকার করেন, এবং আপনি যে তথ্যটি পেয়েছি সেটি ভুল। রোগীদের ডিসচার্জ দেওয়ার পরেও খাবারের বিল কেন এই প্রসঙ্গে বলেন, এটা হলে বিষয়টি দেখা হবে।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম শাহরিয়ারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি সঠিক নয় এর পরেও কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, এরকম অভিযোগ প্রায়ই আমাদের কাছে আসে,যা অনেকেই ভুল তথ্য দেন। তথ্য প্রমাণ আপনার কাছে থাকলে নিউজ করতে পারেন। সঠিক প্রমাণ থাকলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেব।
-এটি