আওয়ার ইসলাম: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব শাহ আলমের ওএমএস ডিলারশিপ কেন বাতিল করা হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।
জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, জেলা রেডক্রিস্টে সোসাইটির সদস্য সচিব, জেলা চেম্বার পরিচালক, হোটেল রেস্তঁরা মালিক সমিতির সভাপতি, জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কমিটির সদস্য ও ওএমএস ডিলার মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী-সন্তান, শ্যালক, ভাই, ভাতিজাসহ ১৩ স্বজনের নামের অস্তিত্ব সম্প্রতি ঘোষিত ওএমএস তালিকায় পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
এরই প্রেক্ষিতে সোমবার মো. শাহ আলমের ডিলারশিপ কেন বাতিল করা হবে না তার ব্যাখ্যা তলব করেন ডিসি।
আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কাউতলীর শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওএমএস ডিলার হিসেবে আপনি (শাহআলম) ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএসের সম্প্রতি ঘোষিত ভোক্তা তালিকায় আপনার স্ত্রী, মেয়ে, ভাইবোনসহ নিকট আত্বীয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন মর্মে বিাভন্ন মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। যা ন্যায়সঙ্গত নয়।
এই কর্মকাণ্ডের কারণে ওএমএস নীতিমালা, ২০১৫ মোতাবেক ডিলারশিপ কেন বাতিল হবে না আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে এর সন্তোষজনক জবাব চাওয়া হয় চিঠিতে।
খাদ্যনিয়ন্ত্রক সুবীর কুমার নাথ বলেন, অভিযুক্ত মো. শাহ আলম আমাদের তালিকাভুক্ত একজন ওএমএস এর ডিলার। ওএমএস এর তালিকায় নিজের পরিবার-পরিজনের নাম আসায় আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ইততিমধ্যে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, আমরা ডিলার শাহআলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ও জেলা আওয়ামী লীগ শিল্প-বানিজ্য সম্পাদক আলহাজ্ব মো. শাহআলমের বিরুদ্ধে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নাম বিশেষ ওএমএস তালিকায় ওঠানোর বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
এরপরই তদন্তে নেমে প্রশাসন তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় তালিকায়। তারা হচ্ছে শাহআলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, আরেক ভাই মো. আলমগীর, শ্যালক মো. তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া।
ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর,সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী একজন,শিক্ষক প্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, ইমাম,পুরোহিত ও গণমাধ্যম প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এই তালিকা প্রণয়ন করবে বলে নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলম নিজের কর্তৃত্বে তালিকা করে তার পরিবারের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে খবর প্রচারিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। নদী রক্ষা সংগঠন নোঙর এর জেলা সমন্বয়ক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ তার ফেইসবুকে লেখেন, আমি লজ্জিত এমন মানুষ আমাদের ব্যবসায়ী নেতা, রেডক্রিসেন্ট'র মতো সংস্থার নেতা, যে আদর্শকে বুকে লালন-পালন করি সে রাজনৈতিক দলের নেতা! আমি লজ্জিত, আমি মর্মাহত।
এ ব্যাপারে শাহআলম বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর বলতে পারবেন। তারা যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তা ছাড়া আমি কোনো কার্ড বণ্টন করিনি। আমি হলাম কেবল ডিলার। ডিলার কোনো কার্ড দিতে পারে না।”
এ ব্যাপারে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ডের কাউতলী এলাকার ওএমএস এর তালিকা তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলমের বড় ভাই সাঈদুর রহমান। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তালিকাটি তিনি যাচাই-বাছাই না করে পৌরসভায় জমা দিয়েছেন। এটি তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
-এটি