আল আমিন (বাপ্পি)
ময়মনসিংহ থেকে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আলেমদের কল্যাণে বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে , যা আমি সৌদি আরব ছাড়া অন্য কোথাও দেখিনি। তারা আমাদের দীনের কথা, কুরআনের কথা শিখিয়েছেন বলেই আমরা এই দৌলত পেয়েছি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরখরিচায় জামিয়া মাহমুদিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়ার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে যোগদান করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খতমে কুরআন ও খতমে বুখারি শরিফ উপলক্ষে আয়োজিত এ মাহফিলে রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল আজাদ মসজিদের খতিব, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার মুহতামিম ও মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্ব করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আল্লামা মাহমুদুল হাসান সারা বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান আলেম। তাকে আপনারা যে এত ভালোবাসেন, আজ এখানে না আসলে তা বুঝতে পারতাম না।
তিনি বলেন, আল্লামা মাহমুদুল হাসান তার গ্রামের বাড়িতে এত সুন্দর মসজিদ ও মাদরাসা গড়ে তুলেছেন, তা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। আমি তাকে বিশ্বাস করি, তার প্রতি আমার ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল। এখানে আনসে পেরে, আমি আল্লাহর দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া জানাই।
এর আগে জুমার নামাজ পূর্ব বক্তব্যে মন্ত্রী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে গিয়ে কখনো কোনো কিছু করবে না। এ ব্যাপারে আমরা ওয়াদাবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের প্রতিটি জায়গায় সুন্দর সুন্দর মসজিদ করে যাচ্ছি। আলেম-ওলামাদের প্রতি সবসময় আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কওমি সনদের স্বীকৃতিও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা-উপজেলার মসজিদের খেয়াল রাখেন।’
সরকার জুমার খুতবায় হস্তক্ষেপ করেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি শ্রেণি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছে, আমরা নাকি জুমার নামাজের আগে খুতবায় হস্তক্ষেপ করেছি। তবে আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, ইমাম সাহেব খুতবার আগে যে বয়ান করেন সেই বয়ানে দেশের কথা বলবেন, সমস্যার কথা বলবেন, মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলবেন। কিন্তু একটি মহল অপব্যাখ্যা দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।’
বাংলাদেশকে মসজিদের দেশ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘মসজিদের দেশ বাংলাদেশ। দেশের অলিতে গলিতে মসজিদ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মতো আল্লাহ ভীরু মানুষ খুব কম দেশে দেখেছি। ধর্মের জন্য আমরা সবসময় কান খাড়া রাখি।’
আলেমদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি তিনি দিয়েছেন। কিন্তু একটি গোষ্ঠী বলতো কওমি মাদরাসায় নাকি জঙ্গিদের উত্থান। যেখানে দ্বীনের শিক্ষা হয়, যেখানে আলেম ওলামারা কুরআন নিয়ে চর্চা করেন সেখানে কোনোদিন জঙ্গির উত্থান হতে পারে না। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যার অনুমতি দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেসব জঙ্গিকে আমরা ধরেছি তাদের প্রায় সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়ে ধংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তবে ইমাম এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীরা জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হয়েছিল সেখান থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম। আজ বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এর পেছনে সবারই অবদান রয়েছে।’
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এমপি কাজিম উদ্দিন ধনু, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ, পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা প্রমুখ।
এ মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বয়ান করবেন ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রাহমানী, নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, বেফাকের সহ সভাপতি মুফতি ফয়জুল্লাহ, জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ ফরিদী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি, মাওলানা হাবীবুর রহমান মিছবাহ (কুয়াকাটা)ম মাওলানা আব্দুল খালেক শরিয়তপুরী প্রমুখ।
আরএম/