আওয়ার ইসলাম: শুধু আসামের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বলেছেন, পুরো ভারতেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি হবে। ওই এনআরসিতে বাদ পড়বে না আসামও। অর্থাৎ পুরো দেশের সঙ্গে আসামে আরও একবার এনআরসি হবে।
বুধবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনে সেকথাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাম্বলী মানুষদের নাগরিকত্ব দিতেই সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে চলেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অমিত শাহর এই কথার মধ্যে দিয়েই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে আসা মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই গণ্য করবে সরকার।
এনআরসি-র প্রশ্নে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের চিন্তার কারণ নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ধর্ম, বর্ণ নির্বেশেষে দেশজুড়ে এনআরসি হবে। সংসদে প্রশ্ন তোলা হয়, নাগরিকত্বের বিষয়ে মুসলিমদের ব্যাপারে সরকার কী ভাবনা চিন্তা করছে।
এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তরে না গিয়ে অমিত শাহ বলেন, শরণার্থী হিন্দু, পার্সি, বৌদ্ধ, জৈনদের নাগরিকত্ব দিতে নাগরিক সংশোধনী বিলের আওতায় আনা হবে। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দেন পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ওই সব শরণার্থীরা নির্যাতিত।
তবে ফের আসামে কেন এনআরসি হবে? অমিত শাহের কথা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট নিয়মে আসামে এনআরসি হয়। কিন্তু দেশজুড়ে যখন এনআরসি করা হবে, সেই নিয়মে আসামেও কার্যকর হবে। তবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই বলে আবারও উল্লেখ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মুসলিমদের কথা বাদ দেয়ায় প্রশ্ন তোলেন এনসিপির এক মুসলিম সংসদ সদস্য । জবাবে অমিত শাহ বলেন, ‘আপনি এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিলকে গুলিয়ে ফেলছেন। এনআরসির আওতায় সবাইকে আসতে হবে। এর সঙ্গে কোনও ধর্মকে নিশানা করার ব্যাপার নেই।’
আসামে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই ১৯ লক্ষের বেশি মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার শাহ বলেন, ‘তালিকায় নাম বাদ গেলে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে যাওয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেকের। আসামের বিভিন্ন প্রান্তে এই ট্রাইবুনাল গড়ে তোলা হবে। কারও সামর্থ্য না থাকলে, আসাম সরকার তার আইনজীবীর খরচ বহন করবে।’
গত সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গের নেতাজি ইন্ডোরের রাজ্য বিজেপির সভায় এসেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিস্তারিত বলে গিয়েছিলেন অমিত শাহ ।
বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে গিয়ে বলুন। কোনও হিন্দুকে দেশ ছেড়ে যেতে হবে না। প্রত্যেককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার দেবে নরেন্দ্র মোদির সরকার।’ এদিন সংসদেও আরেকবার পরিস্কার করলেন, এনআরসি হবে সারা ভারতেই।
রাষ্ট্রহীন হিন্দুদের ভারতের নাগরিকত্ব দিতে পার্লামেন্টের এই অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল উঠানোর পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কার্যত আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া অমুসলিম শরণার্থীদের বৈধতা দিতেই এ সংশোধনী আনা হচ্ছে।
আরএম/