আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ থেকে উপসাগরীয় দেশ কাতারে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রাথমিক বাছাই কমিটির সদস্য মাওলানা ফখরুল হুদা ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ২২ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ ও সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হবে। ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
অক্টোবর মাসে এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে স্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় কাতার ওয়াকফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ প্রক্রিয়া।
কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ জন্য কোনো অর্থ খরচ হবে না, শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
নিয়োগ আবেদন ও পরীক্ষার সময়
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকে রোববার (২৪ নভেম্বর) নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ ও সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হবে। এর পরের শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) থেকে পরের মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল সাতটা থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান মসজিদে প্রাথমিক ইন্টারভিউ শুরু হবে। প্রাথমিক বাছাই চলবে ৯ দিন। দুই সদস্যের এই টিম প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করবেন। এরপর কাতারের ওয়াকফ ও ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম ঢাকায় এসে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
আবেদন প্রক্রিয়া ও অন্যান্য
কাতার ওয়াকফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই সব শর্ত ও প্রক্রিয়া-
এক. মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় মসজিদে (সলিমুল্লাহ রোড, কবরস্থান) আগামী ২২ নভেম্বর থেকে থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার করার সুযোগ থাকবে। ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।
দুই. আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই স্বীকৃত আলেম অথবা ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে। সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়সী হতে হবে। অবশ্যই কোরআনের হাফেজ হতে হবে এবং তাজবিদসহ কোরআন তেলাওয়াতে সক্ষম হতে হবে। পাশাপাশি সুন্দর কণ্ঠ ও ভালো তেলাওয়াতের দক্ষতা থাকতে হবে। যাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ডিগ্রি রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিন. আবেদনকারীকে অবশ্যই পাসপোর্ট অথবা জন্মসনদের সঙ্গে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (মাথায় রুমালসহ) জমা দিতে হবে। পাশাপাশি উত্তীর্ণ প্রার্থীকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে সত্যায়ন করে জমা দিতে হবে। প্রথমে সবার মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মৌখিক পরীক্ষা ও সাক্ষাতকারে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থীকে জীবনবৃত্তান্ত কাগজ ও স্বাস্থ্যসনদ জমা দিতে হবে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো হেফজ প্রতিযোগিতার ফলাফলের সার্টিফিকেট (জরুরি নয়) আনতে হবে।
আবেদনকারীর প্রস্তুতি ও অন্যান্য
এক. পরীক্ষার বিষয়বস্তু কোরআন তেলাওয়াত (হিফজ) হদর ও আজান-ইকামত। আজান-ইকামতের ক্ষেত্রে মক্কা-মদিনার আজান অনুসরণ করা যেতে পারে।দুই. তাজবিদসহকারে কোরআনে কারিমের উচ্চারণ সুন্দর থেকে সুন্দরতর করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। কোরআন সহিহ-শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা।
তিন. লাহান ঠিক রেখে পুরো কোরআন ইয়াদ রাখা। মনে রাখতে হবে, যে কোনো জায়গা থেকে কোরআন তেলাওয়াত করা লাগতে পারে।
চার. সুউচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করা। গলা ছেড়ে আওয়াজ উঁচু করে তেলাওয়াত করা। কারও যদি ‘ইয়াদ-তাজবিদ-লাহান’ ভালো হয়, কিন্তু সে মিনমিন করে আস্তে আস্তে কোরআন তেলাওয়াত করে তা হলে চলবে না। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা চাই।
পাঁচ. উত্তীর্ণরা প্রাথমিকভাবে এক বছরের ভিসা পাবেন, পরে চুক্তি বাড়ানো হবে। নিয়োগ পাওয়ার ৫ বছর পর পরিবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে কাতারে ১ হাজার ৩শ’ বাংলাদেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। কাতারিদের কাছে মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন বেশ সম্মানিত। কাতারে কর্মরত ইমামগণ ৪ হাজার ৮শ’ রিয়াল, মুয়াজ্জিনরা ৩ হাজার ৮শ’ রিয়াল বেতনের সরকারিভাবে ফ্রি বাসা, বিনামূল্যে পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এছাড়া সন্তানদের ফ্রি পড়ালেখার পাশাপাশি আরও অন্যান্য সুযোগ ভোগ করেন তারা।
আরএম/