আওয়ার ইসলাম: বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে কলকাতা ভ্রমণে গিয়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক সোলাইমান হোসাইন।
এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে তার ফেসবুক টাইমলাইনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বশেমুরবিপ্রবির ওই শিক্ষক। তার সঙ্গে এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেটিজেনরা। পাঠকদের উদ্দেশে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
বরাবর,
মমতা দিদি,
পশ্চিমবঙ্গ, ইন্ডিয়া।
বিষয় : বাঙালিদের কাছ থেকে ঈশ্বরতুল্য ইন্ডিয়ান পুলিশের প্রকাশ্যে ছিনতাই প্রসঙ্গে।
প্রিয় দিদি,
আপনার কাছে অতি বিনয়ের সঙ্গে বলছি যে, বৈধ পাসপোর্ট করে, বৈধ উপায়ে ভিসা পেয়ে ২য় বারের মতো ইন্ডিয়াতে এসেছি ১৪-১১-২০১৯ তারিখ। ৩ দিন কলকাতা থাকার পর আজ ১৭-১১-২০১৯ ভোর ৩টাতে মার্কুইস স্ট্রিট থেকে শিয়ালদাহ রেল স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম ট্যাক্সিতে। মাঝপথ পেরিয়ে শিয়ালদাহ স্টেশনের ঠিক আগে সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা (পূর্ব পরিকল্পিতভাবে) এক ইন্ডিয়ান পুলিশের হাতের ইশারাতে ট্যাক্সি ড্রাইভার ট্যাক্সি থামিয়ে দিল। পুলিশ কাছে আসতেই ড্রাইভার বলে উনাকে পাসপোর্ট দাও। ৪ জনের সবাই পাসপোর্ট দেখালাম। বেশ ভাব নিয়ে সবার পরিচয়সহ সকল ইতিহাস শুনল।
আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব বিনয়ের সঙ্গে আমার ক্লিয়ার পরিচয় দিলাম। তারপরে ইন্ডিয়া থেকে ক্রয়কৃত কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য (জুতা, চাদর, কসমেটিকস ইত্যাদি) দেখে বিলের রশিদ দেখাতে বললে আমরা রীতিমতো দেখালাম সবকিছু। সবকিছু দেখানোর পর, সকল বৈধ পথ অনুসরণ করে ক্রয় করার রশিদ দেখানো সত্ত্বেও ঐ ইন্ডিয়ান পুলিশবাবু আমাদেরকে বলে আমরা নাকি ভ্যাট না দিয়ে পণ্য ক্রয় করেছি। তাই পণ্যগুলো নামিয়ে নেবে নতুবা আমাদেরকে থানাতে যেতে হবে।
ড্রাইভারকে বলে ‘গাড়ি ঘুরিয়ে থানাতে চল’। বলতে বলতে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে পড়তে প্রস্তুত। ঠিক এই মুহূর্তে উনার কাছে (পূর্বপরিকল্পিত) একটি রিং আসল। রিসিভ করে ‘স্যার ঠিক আছে স্যার। আমি দেখছি ব্যাপারটা’ এইটা শুনাল আমাদের। সঙ্গে সঙ্গেই বলে, ‘ঐ যে আমার স্যার দাঁড়ানো, স্যার বলেছেন আইন অনুযায়ী ৮, ৪০০ রুপিয়া জরিমানা হয়েছে’। জরিমানা দিয়ে চলে যান’। যেহেতু আমরা সকল বৈধতা অনুসরণ করেছি, তাই জরিমানা দিতে একটু আপত্তি জানালাম। এ জন্য ঐ পুলিশ আমাদেরকে বেশ হুমকি ধামকি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল।
এভাবে কয়েকমিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর ড্রাইভার নেমে গিয়ে এদিক ওদিক থেকে ঘুরে এসে বলে, ‘দিয়ে দে টাকা। না হলে দেশে ফিরতে সমস্যা হবে’। তখন পেছন থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত স্যার হাজির। আসতেই ড্রাইভার বলে ‘স্যারের সঙ্গে মিটিয়ে ফেল। সমস্যা করিসনা’।
রীতিমতো ডাকাতি। যেহেতু ইন্ডিয়া আমার ততবেশি জানাশোনা না এবং দেশে আসার জন্য খুব ব্যস্ততা, তাই থানাতে যাওয়ার হালকা ইচ্ছে হলেও দ্রুত দেশে ফেরার জন্য বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। বার বার বললাম, ‘দাদা আমরা সকল বৈধ পথ অনুসরণ করেছি, আমরা আপনাদের অতিথি। তাছাড়া আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।’
এমনকি আরও বললাম যে, ‘যেহেতু আমরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে ফিরে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী ক্রয় করে দেশে ফিরে যাচ্ছি তাই এখন আমাদের কাছে রুপি আর তেমন বেশি নেই’। কিন্তু না, বুঝেনি আমার কথাতে। অবশেষে ঐ পুলিশনামী ও ড্রাইভার মিলে রীতিমতো ডাকাতি করেই ছাড়ল আমাদের কাছ থেকে।
তারপরে আমরা গাড়িতে বসলাম। ড্রাইভার আমাদের চোখের সামনে থেকে ডাকাতির একটি অংশ ভাগ করে নিয়ে এসে গাড়ি ছাড়ল। ছাড়তে ছাড়তে লক্ষ্য করলাম আরেকটি ট্যাক্সি দাঁড়ালো ঐ একইভাবে। তার ১.৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম শিয়ালদাহ স্টেশনে। নেমে ড্রাইভারকে বললাম, কত টাকা কামালে আমাদের কাছ থেকে? উনি উত্তর দিতে দিতে ভাড়াটা নিয়েই গাড়ি চালিয়ে খুব দ্রুত স্থান ত্যাগ করল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের পেছনের সেই ট্যাক্সিটা এসে পৌঁছাল। জিজ্ঞাসা করলাম ‘ভাই কত নিল আপনাদের কাছ থেকে’? লোকটা খুব কান্না সুরে বলল ‘আপনাদের থেকেও নিছে ভাই’? বললাম ‘হ্যাঁ ভাই’। তখন উনি বললেন, ‘ভাই আমার কাছে ৫,০০০ টাকার মতো ছিল। সবটাই নিয়ে নিছে’। বাকিটা ইতিহাস।
অতএব, আপনার নিকট বিনীত আবেদন, আপনাদের দেশে ভ্রমণ বা চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাঙালিদের সঙ্গে শেষ রাত্রে রাস্তার মাঝে এমন ডাকাতসূলভ আচরণের জন্য সিগনালে থাকা সিসি ক্যামেরা দেখে এবং ঐ সময়ের ডিউটি লিস্ট মিলিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার করুন। নতুবা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের মনটা ভেঙে যাচ্ছে।
বিনীত নিবেদক
মো. সোলাইমান হোসাইন,
সহকারী অধ্যাপক,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ,
বাংলাদেশ।