আওয়ার ইসলাম: আফগানিস্তানে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত চলা সংঘাতের অবসান ঘটাতে তালিবান নেতাদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। যার অংশ হিসেবে আগামী ২০ সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের প্রায় পাঁচ হাজার চার শতাধিক সেনা প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দেশটির এক টিভি সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য এই চুক্তির বিস্তারিত জানান ওয়াশিংটনের নিযুক্ত আফগান বিষয়ক বিশেষ দূত জালমাই খলিলজাদ।
যদিও চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদন প্রয়োজন বলে দাবি তার। মূলত তালিবান নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের নবম ধাপের আলোচনার ফলাফল আফগান সরকারকে অবহিত করার পর সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি।
কাবুল সফরের সময় আফগান সম্প্রচারমাধ্যম টোলো নিউজকে তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য চুক্তির বিস্তারিত জানান খলিলজাদ। সোমবার ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তালেবান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে যে আফগানিস্তান আবারও এমন কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না যারা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের ওপর হামলা চালাতে চায়। তিনি বলেন, আমরা একমত হয়েছি যে, যদি চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত ঠিকঠাক চলে তাহলে আমরা বর্তমানে উপস্থিত থাকা পাঁচটি ঘাঁটি ১৩৫ দিনের মধ্যে ছেড়ে দেব।
এর আগে শুক্রবার আফগানিস্তানে নিয়োজিত মার্কিন সেনা কমিয়ে ৮৬০০ জন করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তালেবান সদস্যরা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং আফগানিস্থান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান ও মার্কিন সরকারের মধ্যকার সর্বশেষ এ আলোচনা মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের একদফা দাবিতে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নাইন ইলেভেনের হামলার পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান শেষ হয় ২০১৪ সালে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী এখনও আফগান সেনাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানে এখনও ১৪ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর ব্যাপক রক্তক্ষয় শেষে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে গত বছরের জুন থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় বসতে শুরু করে তালিবান। যার অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে সেখানে উভয় পক্ষের টানা নবম ধাপের আলোচনার সমাপ্তি হয়।
বিশ্লেষকদের দাবি, এর মাধ্যমেই তালিবান নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ বাতিলের চুক্তি স্বাক্ষর করবে। এতে উভয় পক্ষের পাশাপাশি অঞ্চলটির বাসিন্দাদের মধ্যেও এক চরম শান্তি পরিস্থিতি বিরাজ করবে।
আরএম/