আওয়ার ইসলাম: ভারতের আসামে নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে মুসলিমদের বাদ পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আসামের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) অবশ্যই সেখানকার মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা কিংবা তাদের রাষ্ট্রহীন করার হাতিয়ার হতে পারে না। এ ধরনের পদক্ষেপে ইউএসসিআইআরএফ অস্বস্তি বোধ করে।
ইউএসসিআইআরএফ-এর পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ার টনি পারকিনস এবং সংস্থাটির কমিশনার অনুরিমা ভারগাভা এ বিবৃতি দেন।
সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাসিন্দারা দেশটির চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকায় (এনআরসি) অন্তর্ভুক্ত হতে আগামী ৩১ আগস্টের চূড়ান্ত সময়সীমার মুখোমুখি হয়েছেন।
এ সময়ের মধ্যে তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নথি জমা দিতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আসামের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা।
এনআরসি নিয়ে ২০১৮ সালের জুনে জাতিসংঘের চারজন বিশেষ দূত একটি যৌথ চিঠি লিখেছিলেন। এতে বলা হয়, হালনাগাদ এই নাগরিক তালিকা এ অঞ্চলের মুসলমানদের নাগরিক অধিকার বা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। এটি সরকারের চলমান ‘রিলিজিয়াস টেস্ট’-এর প্রচেষ্টার একটি অংশ, যার মূল লক্ষ্য মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয়া।
ইউএসসিআইআরএফ-এর চেয়ার টনি পারকিনস বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় বিশ্বাসের প্রতি আস্থা এবং ধর্মীয় বহুত্ববাদের প্রতি শ্রদ্ধা-এ বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সমাজব্যবস্থার শক্ত ভিত্তি। দেশটির সংবিধানেও এ মূল্যবোধের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তবে আসামের নাগরিক তালিকার সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে নাগরিকত্ব যাচাই ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার আদর্শের পরিপন্থী।
ইউএসসিআইআরএফ-এর কমিশনার অনুরিমা ভারগাভা বলেন, সরকারের যে কোনও নীতিমালা বা পদক্ষেপ যা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে তার ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতই হোক আর অনিচ্ছাকৃতই হোক। নাগরিক তালিকা অবশ্যই মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার হাতিয়ার হতে পারে না। এটি তাদের রাষ্ট্রহীন করার উপলক্ষ হতে পারে না।
অনুরিমা ভারগাভা বলেন, প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু মুসলমানরাই ব্যাপক অসুবিধার মুখে পড়বে। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি নেতিবাচক ও বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে বসবাসের নথিপত্র দেখাতে পারবেন তারাই নাগরিকত্ব প্রমাণে সক্ষম হবেন। এর ভিত্তিতে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ভারত সরকার আসাম রাজ্যটির নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করে, যাতে বাদ পড়ে ৪০ লাখ মানুষের নাম। যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের নাম বাদ পড়েছে বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, আসামের নাগরিক তালিকায় বাদ পড়া প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বেশিরভাগই মুসলমান। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার পরিকল্পনা করছে ১০টি বন্দিশিবির গড়ে তোলার জন্য।
যেসব বন্দি শিবিরে কয়েক হাজার মানুষকে আটক রাখা যাবে। ভারত আসামের অবৈধ অভিবাসীদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এর ফলে দৃশ্যতই এসব মানুষ রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে যাচ্ছেন।
-এএ