আওয়ার ইসলাম: কক্সবাজারে জমির বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষ এক মসজিদের ইমামকে ফাঁসাতে গিয়ে আপন ভাগ্নিকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে নুরুন্নবী নামের এক ব্যক্তি।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিচক্ষণতায় আসল ঘটনা বেরিয়ে এলে ঘটনা জানাজানি হয়। ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই মামা ও তার কর্মে সহযোগিতার অভিযোগে তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও ইউপি সদস্য আলমগীরকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন এর মুহুরী পাড়া গ্রামের মৃত কবির আহমদের পুত্র চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভোজপুর হাজিরখিল হাজী আব্দুল ওয়াহাব জামে মসজিদের পেশ ইমাম
মাওলানা মোঃ ফরিদুল আলম নামে একজন ইমামের সঙ্গে একই গ্রামের নুরুন্নবীর জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে থানা আদালত ও ইউনিয়ন পরিষদে একাধিক মামলা রয়েছে।
এসব ঘটনার জেরে নিজের ভাগ্নিকে নিজে ধর্ষণ করে প্রতিপক্ষ মাওলানা ফরিদকে ফাঁসাতে তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৩ জুলাই একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে (কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর ৭) বলে অভিযোগ রয়েছে। ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার মা লতিফা বেগম এর নাম ব্যবহার করে মামলার বাদী করা হয় নুরুন্নবীর স্ত্রী আমিনা বেগমকে।
সদর মডেল থানার মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম জানান, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার সাথে কথা বলে নানাপ্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আমি সাথে সাথে আমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন খন্দকারকে অবহিত করি। এরপরে ধর্ষণের স্থান ও মামলার বাদীর পরিচয় জটিলতাসহ নানা অসঙ্গতিতে ধীরে ধীরে অন্য কাহিনী বের হয়ে আসতে শুরু করে।
আবুল কালাম আরও বলেন, ১৬ জুলাই রাতে ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যা, তার মা ভাই বোন, মামা-মামী কয়েকজন প্রতিবেশীকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন সকালে ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যা ও তার মাকে আদালতে জবানবন্দির জন্য পাঠিয়ে বাকিদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যা আদালতে জবানবন্দিতে জানায়, ৩ জুলাই রাতে ধর্ষণের শিকার শিশু তার নিজ মামা নুরুন্নবী ও মামী আমিনা বেগমসহ কক্সবাজার শহরের জেলগেট এলাকায় ইউপি সদস্য আলমগীরের বাড়িতে বেড়াতে যায়।
রাত আড়াইটার দিকে মামী আমেনা বেগম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে, তার মামা নুরুন্নবী মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। মামা-মামী তাকে শিখিয়ে দেয়, পুলিশকে যেন সে বলে যে মাওলানা ফরিদ তাকে ধর্ষণ করেছে।
এরপরে ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যাকে হাসপাতালে রেখে মামা নুরুন্নবী ও মামী আমিনা বেগম থানায় এসে নিজেকে লতিফা বেগম দাবি করে টিপ সই দিয়ে মামলা দায়ের করে। টিপ সই দিয়ে মামলা দায়ের করা ও শিশুটির মায়ের সাক্ষর এক না হওয়াসহ বেশ কিছু কারণে সন্দেহ তৈরি হয় তদন্তকারীদের।
আবুল কালাম আরও বলেন, মামলার একমাত্র আসামি মাওলানা ফরিদের মোবাইল লোকেশন বের করে দেখা গেছে ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকায় ছিলেন।
মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি সর্ম্পকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (তদন্ত) মোঃ খাইরুজ্জামান জানান, ১৯ জুলাই ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার মা লতিফা বেগম বাদী হয়ে, নিজের ভাই নুরুন্নবী, ভাইয়ের স্ত্রী আমেনা বেগম ও তাদের নিজের এলাকার ইউপি সদস্য আলমগীরকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।
পুলিশ পরদিন এই মামলার প্রধান আসামি ধর্ষক নুরুন্নবী, ভুয়া বাদী সাজা তার স্ত্রী আমিনা বেগমকে গ্রেফতার করে। এরপর দিন আটক করা হয় ইউপি সদস্য আলমগীরকে। তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, জমির বিরোধে একজন মসজিদের ইমামকে কে ফাঁসাতে এত বড় জঘন্য ঘটনা ঘটাতে পারে, এটা প্রথমে ভাবতে পারিনি। আসল অপরাধীরা কোনভাবে পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
আরএম/