রকিব মুহাম্মদ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার ‘অদ্ভুদ’ বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তার সহকর্মীসহ কার কার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। সাথেসাথে প্রিয়া সাহার বিচারের দাবিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়ে আছে।
এমন সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ ও মুসলিম সমাজের নামে অদ্ভূত অভিযোগ করা এই নারীর পক্ষ নিয়েছেন ‘জাগো হিন্দু’ নামের একটি বাংলাদেশি ফেসবুক গ্রুপ। ব্যাপক সমালোচনায় থাকা প্রিয়া সাহার পক্ষ নিয়ে গত রাত ২ টায় গ্রুপটিতে একটি পোস্ট দেয়া হয়।
‘জাগো হিন্দু’ গ্রুপটির ওই পোস্টে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী শ্রীমতি প্রিয়া সাহা গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করে যেসব তথ্য দিয়েছেন তার সাথে জাগো হিন্দু সহমত পোষণ করে।’
‘প্রিয়া সাহা মিলিয়ন ও বিলিয়ন শব্দে গিয়ে ভুল করে ফেলেছেন। কারণ আমরা বাঙালিরা লক্ষ-কোটি শব্দ বেশি ব্যবহার করি। সেক্ষেত্রে শ্রীমতি প্রিয়ার অনিচ্ছাকৃত ভূল তথ্য ‘৩০ মিলিয়ন’ শব্দটি ব্যতিত তার বাকি সম্পূর্ণ বক্তব্যের সাথে আমরা সহমত পোষণ করি।’
https://www.facebook.com/JagoHinduworld/posts/1351170125042347
‘ইতিমধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমাদের শ্রদ্বেয় ব্যক্তিত্ব শ্রী রানা দাসগুপ্ত স্যার ও জাগো হিন্দুর সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধার্থ বসু সিধু শ্রীমতি প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেছেন। তাই দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের উচিত প্রিয়া সাহার পাশে দাঁড়ানো। আজ যদি আপনারা মেরুদণ্ড সোজা করে প্রিয়ার পক্ষে না দাঁড়াতে পারেন তবে আর কোনদিন আপনারা এদেশে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে দেশের মুসলিম সমাজ ও সরকারের নামে নালিশ করে। প্রিয়া সাহা ট্রাম্পকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশেই থাকতে চাই।
প্রিয়া সাহা বলছেন, এখনও সেখানে (বাংলাদেশে) ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমাও দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এর কোন বিচার হয়নি।
প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্যের পর ট্রাম্প বলেন, কারা জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে? তখন ওই নারী মুসলিমদের নামে বিষদগার করে বলেন, মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সবসময়।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভাবমূর্তি নষ্টের কারণ’ বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সামাজিক মাধ্যমে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটা দেখি ঘষেটি বেগম। অপর একজন লিখেছেন, এটা কাদের চাল হতে পারে বুঝলাম না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে নালিশ করেছে তা চক্রান্তের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশ নিয়ে প্রিয়া সাহার ‘মিথ্যা অভিযোগে’র তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, প্রিয়া সাহা কেন এমনটি করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে প্রতিমন্ত্রী এই কথা বলেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এক বাংলাদেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক বলে মনে করেন না ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে অপরকে শ্রদ্ধা করে।
উল্লেখ্য, প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। রানা দাস গুপ্ত ওই ঐক্য পরিষদের সভাপতি। প্রিয়া সাহার বাড়ি চরবানিরী মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।
আরএম/