কামরুল হাসান মামুন : মেয়র সাহেব গ্রামে গিয়ে ধান কাটতে বলেছেন। আচ্ছা তিনি কি জানেন বছরে কতোদিন ধান কাটার ডিমান্ড থাকে? তিনি কি জানেন রিকশা চালানো কতো কষ্টের? কেউ কি ইচ্ছে করে শখে, আহ্লাদ করে রিকশা চালায়? এই ধরনের কথা বলে এদের অপমান করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?
ঢাকা শহরে রিকশা থাকবে কি থাকবে না সেটা একটি গবেষণালব্ধ আলোচনার বিষয়। ট্রান্সপোর্ট এক্সপার্ট মাত্রই জানেন এই শহর তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে। যেখানে মোট জায়গার ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা সেখানে আমাদের আছে ৭ শতাংশের মতো। এর দায় কি রিকশাওয়ালাদের?
যেখানে নদী খালকে গণট্রান্সপোর্টের জন্য ব্যবহার করা যেতো সেই নদী ও খালকে আমরা গলাটিপে হত্যা করে ফেলেছি। এর দায় কি রিকশাওয়ালাদের? বড়লোক আর বড় অফিসারদের চলাচলের জন্য নামমাত্র দামে সিএনজি দেয়ায় রাস্তার ধারণ ক্ষমতার বেশি প্রাইভেট বা অফিসিয়াল কার। আমাদের বড় কর্তারা একা একজন অফিসে যাওয়ার জন্য পাজেরো স্পোর্টস প্রাদো ইত্যাদি বিলাসবহুল বড় গাড়ি ছাড়া হয় না। কেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাস হলে হয় না?
এসব অতিরিক্ত গাড়ির কারণে যানজটের দায় একা রিকশাওয়ালাদের? গণপরিবহনের ব্যবস্থা না করতে পারার দায় কি একা রিকশাওয়ালাদের। এদেরকে উঠানোর আগে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে মানুষের অফিস, আদালত, স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
রিকশা বন্ধ করে কিছু মানুষের আরামের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা যায় সঙ্গে তার চেয়ে অধিক মানুষের বেআরামের ব্যবস্থাও হয়। সিদ্ধান্তগুলো যারা নিচ্ছেন তারা শুধু তাদের আরামটাই দেখছেন। এটা ঠিক একটি রাস্তায় নানা গতির বাহন একসঙ্গে চলতে পারে না এবং চলতে দিলে কেউই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারবে না। আজ হোক কাল হোক রিকশা বন্ধ করতেই হবে। কিন্তু তার আগে অনেকগুলো করণীয় আছে সেই করণীয়গুলোও ঠিকঠাকভাবে করতে হবে।
প্রথম কাজ হওয়া উচিত সড়কের চাঁদাবাজি বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হওয়া উচিত সমগ্র বাস সার্ভিসকে একটি বা কয়েকটি কোম্পানিতে ভাগ করা। মাসিক, সাপ্তাহিক এবং দৈনিক কার্ড ব্যবস্থা চালু করা। ওইসব অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না সেরা সবচেয়ে াঁষহবৎধনষব জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত করা বলদামি।
আমরা না মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছি তাহলে রিকশা চালনার মতো এতো অমানবিক কাজ মানুষ এখনো কেন করে? একটি নগরীতে কীভাবে চলতে হয় তার সম্মন্ধে ন্যূনতম কোনো জ্ঞান ছাড়াই রিকশা চালাচ্ছে, কারণ এটা করে জীবিকা নির্বাহ ছাড়া তাদের আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। কারণ গ্রামে-গঞ্জে কোনো কিছু করে জীবনযাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। উচিত উপজেলার দিকে নজর দেয়া।
প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। সকল কিছুর কেন্দ্র ঢাকাকে বানালে এ রকম হ-য-ব-র-ল অবস্থা হবেই। এই শহরের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এখানে কোনো পরিকল্পনার ছাপ নেই। আর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেয়া। এই শহরকে আর বাসযোগ্য করা সম্ভব নয়।
ফেসবুক থেকে/আরএম