শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘মুমিন যেভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মোহাম্মদুল্লাহ সাদেকী

মাহে রমজান বান্দার প্রতি আল্লাহ পাকের মহান দান। মাহে রমজান সংজম ইবাদত তাকওয়রা অর্জনের মাস। আল্লাহ পাকের  নৈকট্য লাৈভের মাস। যেভাবে আকাশের মাঝে সূর্য একটি সর্বশ্রেষ্ঠ নক্ষত্র। ঠিক তেমনইভাবে রমজান ১২ মাসের মাঝে সর্বশেষ্ঠ একটি মাস রমজান।

রমজান মাস সম্পর্কে রাসুল সা. ইরশাদ করেন আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোজা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ রোজা ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজা রেখেছি।’

সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)।

আর যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় রোজার জন্য সে আনন্দিত হবে। বুখারির অন্য বর্ণনায় আছে, সে (রোজাদার) পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। রোজা আমার জন্যই।

আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে (পালিত) হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব।

সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।’ (বুখারি ১৯০৪, ১৮৯৪, ৫৯২৭, ৭৪৯২, ৭৫৩৮, মুসলিম ১১৫১, তিরমিযি ৭৬৪, ৭৬৬, নাসায়ি ২২১৫-২২১৯, আবু দাউদ ২৩৬৩, ইবন মাজাহ ১৬৩৮, ১৬৯১, ৩৮২৩, আহমদ ৭২৯৫, ৭৪৪১, ৭৬৩৬, ৭৭৮১, ৭৯৯৬, ৮১৩৮, ৮৯৭২, ৯৬২৭, ৯৬৩১, মুওয়াত্তা মালিক ৬৮৯)

এ হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় রমজানের গুরুত্ব মর্যাদা কত বেশি। এ মাস আল্লাহর সান্নিধ্য  অর্জনের মাধ্যম। আল্লাহর মুমিনের জন্য উপহার এ মাস। যে এ উপহার গ্রহণ করবে, কাজে লাগাবে। সে গন্তব্যে পৌঁছবে ও সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছবে। যে কাজে লাগাবে না সে বঞ্চিত হবে। রাসুল সা. তার পবিত্র বাণীতে তাই বলেছেন।

রমজান মাস। এ রমজানের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য রমজানের হক আদায় করা আবশ্যক। মাহে রমজানে আল্লাহ পাক রোজার বিধান করেছেন। এটি ইসলামের পাচটি বিধান এর অন্যতম। এ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ইবাদত। ইবাদতের বুনিয়াদ তাকওয়া। তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম হচ্ছে রোজ।

তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা রোজার বিধান দিয়েছেন। সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারো।

সুতরাং বলা যায় রোজার বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে থেকে তার মোমিন বান্দাদের তাকওয়া অর্জনের জন্য প্রদত্ব একটি এলাহী প্রেস্ক্রিপশন। মুমিন দীর্ঘ ১১ মাস পাপাচার, অনাচার গুনাহ পঙ্কিলতা কুলুুসতায় ঢুবে যায়। অন্তরটি কালো হয়ে যায়। চরম পর্যায় রোগাক্রান্ত হয়ে যায়।  জাহান্নামের কাছাকাছি চলে যায়।

আল্লাহ তাই তার বান্দাকে এ এক মাস রোজার মাধ্যমে তার গুনাহ মুক্তি পাপ মুক্তি অর্জন করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার এক সুবর্ণ সুযোগ দান করেন। এ প্রেস্ক্রিপশন যে মেনে চলবে। সে তাকওয়া অর্জনের মধ্য দিয়ে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। যেমন ডাক্তারের পদত্ব প্রেস্ক্রিপশন রোগী মেনে চললে রোগ মুক্তি লাভ করে । অন্যথায় পর্যায় ক্রমে সে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে সয্যাসায়ী হয়ে যায়।

রমজান মাসে রোজা ও বিজ্ঞান

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মুমিনদের এ দীর্ঘ এক মাসের রোজা কল্যাণকর বলে বিবেচিত হয়েছে। গবেষণায় জানাগেছে ১১ মাস শারীরিক বিভিন্ন রোগাক্রান্ত ব্যাক্তি পেটের সমস্যা ঝর্ঝরিত ব্যাক্তি ১ মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হয়।

পেটের বিভিন্ন পিরা। যা অনাহারে পেটের রোগ জন্য হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে। যে রোজা তাদের মত রোগীকে রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।

রোজা সম্পর্কে বিধর্মীদের উক্তি অধুনা বিশ্বে সমাদ্রিত

বিন্ন ধর্মীরাও ইসলামের এ বিধনের প্রতি সম্মান পদর্শন করে থাকে। ১ মাস সিয়াম সাধনা একটি মানব জীবনের জন্য কল্যাণকর। তা তাদের গবেষণায় বাস্তব সম্মত বলে ফুটে উঠেছে।

বিধানগত দিক থেকে মানুষ ইসলামের যতগুলো পালন করে থাকে সবগুলোই কল্যাণকর। তবে রোজার মাধ্যমে অন্যগুলোর থেকে ভিন্নতা রয়েছ। অন্য যে কোনো ইবাদতে রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য হতে পারে। কিন্তু রোজার মধ্যে রিয়ার আভাস পাওয়া যায় না। এজন্যই আল্লাহ রাসুল ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন। রোজা আমার জন্য আর আমি এর প্রতিধিান দিয়ে থাকি। যে বিষয়ের নিশ্চিয়তা আল্লাহ নিজেই নিচ্ছেন তার গুরুত্ব কত বেশি হতে পারে বলেন।

রোজার সাওয়াব এতটটাই বেশি যা একজন মুমিন কোনো প্রকারের পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে মাপা যায়না। আবু হুরায়রা এর একটি হাদিসই যতেষ্ট এর জন্য। রোজা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো।

সুতারাং এতবড় মর্যাদা পেতে হলে অবশ্রই মাহে রমাজনের হক আদায় করেতে হবে। রোজাগুলো তার হক আদায়ের মাধ্যমে আদায় করতে হবে । মাহে নরমজানের অতিবাহিত করার জন্য একমাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে কাটাবার জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। এর জন্য রমাজনের শুরুর প্রস্তুতি মাঝের প্রস্তুতি ও শেষের প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজান আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এর জন্য প্রস্তুতি নেয়া আমাদের জন্য অপরিহয্য। আর প্রস্তুতি নিতে আমাদের করণীয় অনেকগুলো।

১. হালার  উপার্জন করা। ২. ইসলামের সব বিধিবিধান আদায় করা ৩. বন্ধু বান্ধব অত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশির হক আদায়ের প্রস্তুতি নেয়া। ৪. আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রস্তুতি নেয়া ৫. জীবনের সব ধরণের গুনাহ এর জন্য কায়মনো বাক্যে আল্লাহর কাছে তাওবা কারার প্রস্তুতি নেয়া ৬. যারা ব্যবসায়ী আছে তারা ধব্যমূল্যের দাম কমিয়ে দিয়ে মানুষের জন্য সহজ করা।

৭. ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মহান দায়িত্ব আমর বিল মারফ ও নাহি আনিল মুনকার করতে হবে। ৮. রমজারন মাস রোজা রাখা কালীন সব ধরণের ঝগড়া বিবাদ হানাহানি পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ধোকা প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য চেণষ্টা করা। নিজের হাত জবান মুখ সব অঙ্গকে সব ধরণের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়া। কুরআন তেলাওয়াত করার প্রস্তুতি নিতে হবে। সুতরাং এ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে একজন মুমিন বান্দা খাঁটি মুমিন হিসেবে আল্লাহর দরবারে স্বীকৃতি পাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক: খতিব মগবাজার ওয়ারলেস কলোনী মসজিদ, মুহাদ্দিস মানিকনগর জামিয়া ইসহাকিয়া মাদরাসা, প্রধান মুফতি জামিয়া শায়েখ যাকারিয়্যা কাঁচকুড়া উত্তরখান ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ