আওয়ার ইসলাম: যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।
অনেকে টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ দেখে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও দোষীদের ফাসি দাবী।
মেয়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউর বাইরে বসে কাঁদছেন নুসরাতের বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা। মাওলানা একে এম মুসার একমাত্র মেয়ে ছিল নুসরাত। ফেনীর কোম্পানিগঞ্জের জামিয়া শরাফাতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক তিনি।
বুধবার রাত সোয়া ১০টায় আইসিইউর বাইরে নুসরাতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তাকে দেখে নুসরাতের বাবা ও ভাই জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন।
এ সময় ডা. সামন্ত লাল সেন তাকে বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি তাও আপনার মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।
কান্না ভেজা চোখে নুসরাতের বাবা বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আমি নিজে দেখেছি। আপনাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করেন। আপনারা আমাদের দেখে রাখবেন।
তিনি বিড়বিড় করে বলছেন, ‘আমার মা নুসরাত। আহারে আমার মা, আহারে আমার মা’।
তিনি বলছেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে নুসরাত,মেয়েটা কত সুন্দর ছিল, কত বড় বড় বিয়ের পাত্র এসেছিল। আমার মাকে আমি লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছিলাম-সেই মা আমার’।
তিনি সুবিচার দাবি করে বলেন, ‘আমি সুবিচার চাই। আইনে যে শাস্তি আছে, সেই শাস্তি চাই, আমি বিচার চাই। ন্যায়বিচার চাই।’
এর আগে, বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করেন। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সোমবার রাতে এজাহারে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। অন্য আসামীরা হলেন পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।
ইতিমধ্যে ওই মামলার তিন আসামী সহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সহ ৭ জনকে রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্য অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমএম/