আওয়ার ইসলাম: ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তৃতি, ইসলামের প্রসার, আত্মশুদ্ধি ও সমাজ সংস্কারের মহান ব্রত নিয়ে জাতীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির উদ্যোগে চট্টগ্রামের পলোগ্রান্ড ময়দানে তিনদিনব্যাপী (৭, ৮ ও ৯ মার্চ ২০১৯) ঐতিহাসিক বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরের প্রথম দিনেই লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নিয়েছে।
চরমোনাইয়ের পীর সাহেব হুযুর ও দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখের বয়ান, দীনের বিভিন্ন বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, ইবাদত-বন্দেগি ও জিকিরের মাধ্যমে মাহফিলের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
মাহফিলের প্রথম দিনের শেষ বয়ানে মারিফত হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, ‘আমাদের দাদাজন সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক (রহ.) ও আব্বাজান সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম (রহ.) মাহফিলের প্রথম দিন মা’রিফতের বয়ান করতেন, দ্বিতীয় দিন শরীয়তের এবং তৃতীয় অর্থ-সমাজসহ বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করতেন।’
মা’রিফতের ব্যাখ্যা দিয়ে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘মারিফত অর্থ চেনা ও পরিচয়। কোনো জিনিসের পরিচয় বুঝে আসলেই তার মানুষ তার জন্য পাগল হয়ে যায়। দুনিয়ার ধন-দৌলত, মেম্বার-চেয়ারম্যানির মানুষ পাগল। কারণ এসব ধন-দৌলত কি জিনিস সে তার পরিচয় পেয়েছে। অনুরূপভাবে আল্লাহকে চেনা-জানা এবং পরিচয় জ্ঞাত হওয়ার নামই হচ্ছে মারিফত। এ মারিফতের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর হুকুম-আহকাম, বিধিবিধান এবং আদেশ-নিষেধ পালন করা।’
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘মারিফত ও শরীয়ত এক ও অভিন্ন; আলাদা কিছু নয়। রুহ ছাড়া যেমন শুধু দেহ মানুষ নয় এবং দেহ ছাড়া কেবল রুহ মানুষ হতে পারে না, তেমনি মারিফত ও শরীয়ত একটা ছাড়া অন্যটি দিয়ে কাল কিয়ামতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘নামায পড়া আল্লাহর বিধান, এটি শরীয়তের বিধান। কিন্তু যদি এই নামায লোকদেখানোর জন্য কেউ পড়ে সেই নামায আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। নামায আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য অন্তরের গোপন অভিপ্রায়কে শুদ্ধ করতে হবে। আর এটারই মান হচ্ছে মারিফত।’
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ এবং শরীয়তের বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধের পাবন্দি ছাড়া মারিফতচর্চাকে ষোলা আনা ভ-ামি আখ্যা দিয়ে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘কুরআন-সুন্নাহর নীতি ও শরীয়তের বিধি-বিধানকে স্পষ্ট লঙ্ঘন করে যারা মারিফত ও সুফিবাদের নামে গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ নর্দন-কুর্দন এবং বিভিন্ন কুসংস্কর ও শিরক-বিদআতে লিপ্ত রয়েছে তারা পীর-অলি বহু দূরে, তারা আস্ত ভ-ের দল।
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, কারো বদ আমলকে নেক আমলে পরিণত করার ক্ষমতা পীরের নেই। পীর অর্থ গুরু, দীনের শিক্ষক। মানুষকে ভালো-মন্দ বিষয়ে সর্তক করাই তার কাজ। বদ আমলের শাস্তি জাহান্নাম, জান্নাতে নিতে কোনো পীরেরও ক্ষমতা নেই।
মাহফিলে বরেণ্য ওলামা-মাশায়েখের মধ্যে আরও বয়ান পেশ করেন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতী ও হযরত হাফিজ্জী হুজুর (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলীফা হযরতুল আল্লামা মুফতী হাফেজ আহমদুল্লাহ, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী আল্লামা ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব হযরতুল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, জামিয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়ার নির্বাহী পরিচালক ড. জসিম উদ্দীন নদভী, নাজিরহাট জামিয়া নাসিরুল উলুমের ভাইস প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমান কাসেমী, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বেলাল নুর আজীজ, আরবি ম্যাগাজিন বালাগ আশ-শরকের সম্পাদক ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হাফেজ ওবাইদুল্লাহ হামজা।
হালিশহর জামিয়া বায়তুল করীমের নির্বাহী পরিচালক আল্লামা ফরিদ আহমদ আনসারী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণসংযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন হযরত মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (কুয়াকাটা হুজুর), শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহাম্মদ আলী উসমান, মাওলানা মুফতী দেলওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা মুফতি হাসান মুরাদাবাদী, গোলাম কিবরিয়া শরীফী, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।
আরআর