আওয়ার ইসলাম: মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি দাবি করা আওয়ামী লীগে রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস নেতারা রয়েছে জানিয়ে তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কথিত স্বপক্ষ শক্তি দাবি করে এর বিচার করলেও তাদের দলে থাকা রাজাকারদের বিষয়ে তারা একেবারে নীরব-এ মন্তব্য করে রিজভী বলেন,আওয়ামী লীগে কুখ্যাত রাজাকার, আল বদর, আল শামস, গণহত্যকারী, গণধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারীসহ অসংখ্য ব্যক্তি স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী ঘৃণ্যকর্মে জড়িত ছিল।
এই ব্যক্তিরাসহ তাদের সন্তান-সন্ততি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা বা তাদের টিকিটে নির্বাচন করছেন। কিন্তু এখন তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আওয়ামী লীগের যেসব যুদ্বাপরাধীর নাম ও তাদের পরিবারের কর্মকাণ্ডের তথ্য উল্লেখ করেন, সেগুলো তুলে ধরা হলো:
১. অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য। আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাজাকার পরিবারের সদস্য।
২. লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফারুক খান। পর্যটন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন।
৩. ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর ভূমিকা সর্বজনবিদিত।
৪. অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন।ময়মনসিংহ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা।
৫. সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড সংসদ উপনেতা ও ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য।
৬. কাজী জাফর উল্লাহ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন।
৭. মুসা বিন শমসের। গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলের শ্বশুর।
৮. মির্জা গোলাম কাশেম। জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, যুবলীগের লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকার দলীয় হুইপ মির্জা গোলাম আযমের বাবা।
৯. এইচ এন আশিকুর রহমান। রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক।
জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, রাজাকার আশিকুর রহমান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বলে তার বিচার করবেন না, তা হয় না। আমরা সব রাজাকারের বিচার চাই। মন্ত্রিসভায় রাজাকার রেখে রাজাকারের বিচার করা যায় না।
১০. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। চাঁদপুর-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর।
১১. মাওলানা নুরুল ইসলাম। জামালপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম ।
১২. মজিবর রহমান হাওলাদার। কোটালীপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ।
১৩. আবদুল বারেক হাওলাদার। গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগমের পিতা আবদুল বারেক হাওলাদার ৭১ এর দালাল ছিলেন।
১৬. মোহন মিয়া। গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি আমির হোসেনের পিতা মোহন মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় তার নাম ছিল ১৫৭ নম্বরে।
১৭. মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়ার বাবা মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া রাজাকার ছিলেন।
১৮. রেজাউল হাওলাদার। কোটালিপাড়া পৌর মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম অহেদুল ইসলামের ভগ্নিপতি রেজাউল হাওলাদের নাম ২০৩ জন রাজাকার, আল বদর, আলশামসসহ গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্বাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি আল বদর সদস্য হিসেব স্থানীয় মু্ক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
১৯. বাহাদুর হাজরা। কোটালিপাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র এইচ এম অহেদুল ইসলামের পিতা বাহাদুর হাজরার নাম গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন।
২০. আ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার। গোপালগঞ্জের এ পি পি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদারের নাম গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্বাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি পাকিস্তানিদের দোসর ও আল বদর বাহিনীর সহযোগী ছিলেন।
২১. হাসেম সরদার। অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদারের পিতা হাসেম সরদারের নাম কোটালীপড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে।
২২. আবদুল কাইয়ুম মুন্সি। জামালপুর বকশিগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি অবুল কালাম আজাদের পিতা আবদুল কাইয়ুম মুন্সীর বিরুদ্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্বাদের হত্যাসহ অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গত ৬ এপ্রিল জামালপুর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মালিচর নয়াপাড়া গ্রামের সিদ্দিক আলী এ মামলা দায়ের করেন।
-আর এইচ