সুফিয়ান ফারাবী
সাভার থেকে
টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সা'দপন্থীদের হামলার প্রতিবাদে সাভারে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ তাবলীগের সাথীরা। মিছিল শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্বারকলিপিও পেশ করেছেন নেতৃবৃন্দ।
দাওয়াতে তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গি ইজতেমা মাঠে গত ১ ডিসেম্বর শনিবারে মাওলানা সা'দের অনুসারীগণের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সর্বস্তরের মুসল্লী।
মিছিলের শুরুতে বক্তারা হামলাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, গত শনিবার সকাল থেকে মাওলানা সাদের অনুসারীরা টঙ্গীর মাঠ দখল করার জন্য মাঠে অবস্থানরত স্বেচ্ছাসেবীদের উপর লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে একাধিক সাথীকে শহিদ করে এবং প্রায় ৩০০ বা অধিক সাথীদের জখম করে আহত করেছে। আমরা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ হামলায় সাভারের মাওলানা জিয়া বিন কাসেমকে স্থানীয় উলামায়ে কেরাম জড়িত বলে মনে করছেন। এ ছাড়াও সাভারের তাবলীগের সাথী শাফিক, ডা. আ. কুদ্দুসগং এর নেতৃত্বে একদল উগ্র সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল বলেও অভিযোগ তুলছেন সাভারের উলামায়ে কেরাম৷
এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দাওয়াতে তাবলীগের ইতিহাসে ঘটেনি । এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং দেশের আলেম উলামা এবং মুসল্লিদের মাঝে ঐক্য বিনষ্টের সুক্ষ্ম চক্রান্ত বলে দাবি করেন বক্তারা।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ ধরনের অন্যায় ও ষড়যন্ত্র যদি বন্ধ করা না হয়, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সাভারসহ সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে ৷ তারা যে ষড়যন্ত্রকারী ইতোমধ্যে বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে ।
সম্মিলিত উলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদের অনুসরণ বৈধ নয় বলে ফতোয়া দেয়ার পরও মাওলানা সাদপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমা বানচালের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ এবং টঙ্গী মাঠে পূর্বের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে দাওয়াতের কাজ বেগবান করতে সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা আরও বলেন সাভারের ভুমিদস্যু ও টঙ্গী হত্যাযজ্ঞের নাটের গুরু সন্ত্রাসী জিয়া বিন কাসেম সরলমনা তাবলীগের সাথীদের ভুলবুঝিয়ে বিপথগামী করছে এবং সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ৷ তাই অবিলম্বে এই ভ্রষ্ট আলেমকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি ৷
সাভারের সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে নিম্নোক্ত ৬ টি দাবি পেশ করা হয়:
১. এ হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম, শাহাবুদ্দীন নাসিম, ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ও জিয়া বিন কাসেমসহ হামলার সাথে জড়িত সকলকে আগামী ২৪ ঘন্টার ভিতরে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২. আহত নিহতদের ক্ষতি পূরণ ও চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে।
৩. টঙ্গী ময়দানে এতদিন যেভাবে শুরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথী ও উলামায়ে কেরামের অধীনে ছিলো তাদের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে।
৪. অতিসত্ত্বর কাকরাইলের সকল কার্যকলাপ হতে ওয়াসিফ ও নাসিমগংকে বহিস্কার করতে হবে।
৫. সারাদেশের উলামায়ে কেরাম ও শুরা ভিত্তিক তাবলীগের সাথীদের উপর হামলা - মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে পূর্বঘোষিত (১৮, ১৯, ২০) অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সকাল ৮টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমি সভাপতিত্বে ও মুফতি সুলতান মাহমুদের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী , মাওলানা আ. মান্নান পাটোয়ারী , মাওলানা আনোয়ার হোসাইন কাসেমী, মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মুফতি খন্দকার কাওসার হোসাইন, মাওলানা নাজমূল হাসান বিন নূূরী, মাওলানা শাহেদ জাহেরী, মাওলানা আলী আকরামসহ প্রমূখ উলামায়ে কেরাম।
ধারণা করা হচ্ছে, সাভার-আশুলিয়ার প্রায় লক্ষাধিক আলেম উলামা ও মুসুল্লি বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহন করেন। কেউ কেউ মনে করছেন সাভারের ইতিহাসের সবচে বড় মিছিল এটিই।