আওয়ার ইসলাম: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে জাতিসংঘের অধীনে নতুন বিশ্ব-ব্যবস্বাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মানবতার পক্ষে কাজ করছে না বলে এর কঠোর নিন্দা করে এরদোগান বলেন, জাতিসংঘকে ১৯৪ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, পাঁচ মোড়ল রাষ্ট্রের নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, এ মুহূর্তের অধিক গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যু নিয়ে না ভেবে জাতিসংঘ মাত্র পাঁচটি দেশের স্বার্থ নিয়ে ভাবছে, যাদেরই শুধু ভেটো (আমি মানি না) দেয়ার অধিকার আছে।
৫টি দেশের স্থায়ী সদস্যের ধারণা বাদ দিয়ে নিরপাত্তা পরিষদকে ঢেলে সাজাতে এরদোগান বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটিকে বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদকে নতুনভাবে পুনর্গঠন ছাড়া এর থেকে উত্তোরণ হওয়ার কোনো উপায় নাই। সুতরাং, আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে ও আক্রান্ত জনপদকে রক্ষা করতে কার্যকর বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় তিনি জাতিসংঘের কাঠামোয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য মানেই গোটা বিশ্ব নয়। বিশ্বে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের ১৯৪টি দেশেরই নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের অধিকার থাকা উচিত।
এরদোগানের জন্য জীবন দিয়ে দেব (ভিডিও)
এরদোগান সতর্ক করে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার না করলে জাতিসংঘ ইমেজ সংকটে পড়বে। কেননা মাত্র ৫টি দেশের কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জাতিসংঘ সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। শান্তি ও কল্যাণের মাধ্যমে মানবতার প্রত্যাশা পূরণের ক্ষমতা থেকে জাতিসংঘ দূরে সরে গেছে বলেও অভিযোগ করেন এরদোগান।
তিনি বসনিয়া, রুয়ান্ডা নিয়ে জাতিসংঘের অতীত সাফল্য এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ে অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেন। আবার সাফল্যের দিকে ধাবিত হতে নিরাপত্তা পরিষদ পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এরদোগান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, পাঁচ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের চেয়ে বড় শক্তি বাকি বিশ্ব এবং মানবতার স্বার্থ্যেই আমাদের কণ্ঠস্বর এক জায়গায় এসে মিলিত হয়।
পুরো বক্তব্যেই তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ভেটো দেয়ার অধিকারী পাঁচ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মোড়লিপনার বিরুদ্ধে আঘাত হানেন। তিনি বারবার বলেন, পুরো বিশ্ব এ পাঁচ রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৫ স্থায়ী সদস্য দেশ হচ্ছে আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। এই দেশগুলো জাতিসংঘের গৃহিত যেকোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোটে দিতে পারে। অর্থাৎ জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায় এই ৫ দেশের যেকোন একটি দেশ গৃহিত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট দিলে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি স্লোগান দিয়ে থাকেন যে, পুরো বিশ্ব এ পাঁচ রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী।
এছাড়াও তিনি ২০১৬ সালের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে সহায়তা করার অভিযোগে মার্কিন নাগরিক খৃস্টান যাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে আটকের ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের সাথে সহযোগিতার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। এজন্য বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করা, সেইসাথে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে তুরস্ক নিরব থাকবে না বলে তিনি জানান।
এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরান থেকে তুরস্ক গ্যাস কেনা অব্যাহত রাখবে বলে মন্তব্য করেন এরদোগান।তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে আমেরিকা; মার্কিন সরকারের এসব পদক্ষেপের মুখে আমরা চুপ থাকতে পারি না।”
জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। সেইসাথে ফিলস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের বরাদ্দে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়া নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।
সূত্র: ডেইলি সাবাহ, রয়টার্স।
আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ আলেমদের বৈঠক; শুভেচ্ছা বিনিময়
আরএম/